আরাভ খানের বিত্তবৈভব সম্পর্কে কিছুই জানেন না গ্রামবাসী

6

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ||
দুবাইয়ের আরাভ খান বা রবিউল ইসলাম ওরফে আপন দেশজুড়ে এখন আলোচিত নাম। তবে কী করে এই ব্যক্তি এত বিত্তবৈভবের মালিক হলেন, দুবাইয়ে গিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায় জড়ালেন, তার গ্রামের মানুষ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। দীর্ঘ সময় ঢাকা থাকার পর হঠাৎ করেই লাপাত্তা হন আরাভ খান। হঠাৎ তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর হইচই পড়ে গেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আশুতিয়া গ্রামে। এই গ্রামেই আরাভ খানের বেড়ে ওঠা।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান আরাভ খান গ্রামবাসীর কাছে পরিচিত রবিউল ইসলাম ওরফে আপন নামে। কীভাবে তার নাম পাল্টে ‘আরাভ খান’ হলো এ নিয়েও গ্রামবাসীর মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। শুধু তাই নয়, অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা যায়নি আরাভ খানের বাবা-মা বা অন্য কোনো আত্মীয়-স্বজনের কাছেও।

 

এলাকাবাসী জানান, আশুতিয়া গ্রামে আপনের কেউ এখন আর থাকেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, আপন অবৈধভাবে এই অর্থ-সম্পদ অর্জন করে থাকলে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।

সরেজমিনে আশুতিয়া গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আপনদের পাকা দেয়ালের টিন শেডের একটি ঘর রয়েছে। ঘরের দরজায় তালা দেয়া। এদিক-ওদিক খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি তার কোনো আত্মীয় স্বজনকে। কথা হয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আতীয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, পত্রিকায় তাকে (আরাভ খান) নিয়ে যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, তা পড়ার পর আপনাদের সঙ্গে কথা বলাটা বিব্রতকর। এরপর এই প্রতিবেদকের কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে আতীয়ার রহমান বলেন, ‘আপনের বাবা মতিউর রহমান মোল্লা একসময় খুলনায় ফেরি করতেন। পরে জীবিকার প্রয়োজনে তিনি কোটালীপাড়া চলে আসেন। এরপর কৃষিকাজ ও মাছ ধরাই ছিল মূলত তার পেশা। পরে এখানে তিনি জমি কিনে বাড়ি করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিল আপন। লেখাপড়ায় সে ছিল অমনোযোগী। যতদূর জানি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সে পড়ালেখা করেছে। এরপরই জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে। পরে তাকে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেটাও ১৮-১৯ বছর আগে। এই বাড়িতে আপন স্ত্রী-সন্তান শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন। তবে কয়েক মাস হলো বাড়িতে তাদের কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। সম্ভবত তারা বিদেশ চলে গেছেন।’

হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘হঠাৎ করে আমরা জানতে পেরেছি সে (আপন) কোটি কোটি টাকার মালিক। দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান রয়েছে। কিন্তু তার পরিবারের যে অবস্থা, এত অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়। আমরা মনে করি, অবৈধ পথেই এই টাকা তিনি আয় করেছেন। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। সে দোষী হলে তার বিচার হওয়া উচিত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, আপনকে না চিনলেও তার বাবা মতিউর রহমানকে চেনেন সবাই। কৃষিকাজ আর মাছ ধরেই চলতো তাদের জীবন। কয়েকদিন আগেও আপনের বাবা-মাকে এলাকায় দেখা গেলেও, এখন হঠাৎ করেই আর তাদের দেখা যাচ্ছে না। রবিউল ইসলাম আপন কীভাবে এত টাকার মালিক হয়েছেন বা কি ব্যবসা করেন জানা নেই গ্রামবাসীর।

হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজাহারুল আলম পান্না বলেন, পত্রিকা পড়ে রবিউল ইসলাম আপনের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম। বাড়িতে না আসায় আপনের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। শুধু জানতাম ওর বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আপনের মা-বাবা গ্রামে থাকলেও তাদেরকে দুবাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আপনের গ্রামের বাড়িতে এখন আর কেউ না।

আপনের দুই বোন বাগেরহাটের মোল্লাহাটে শ্বশুরবাড়ি থাকে বলে জানান পান্না।