শুভ হোক খুলনা বেতারের সুবর্ণ জয়ন্তী

121
Spread the love

:নাজমুল হক লাকি>>

ঐতিহ্য, আধুনিকতা আর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশস্থল বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র যাত্রা শুরু করে ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। খুলনা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের নির্জন বিল এলাকা গল্লামারি। সেখানে দিনে দুপুরে মানুষের দেখা পাওয়া যেতো না। রাতে অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে ফেলতো চারপাশ। এমনই এক পরিবেশে গল্লামারির ছোট একটি ভবন থেকে শব্দ যাত্রা শুরু করে খুলনা বেতার।

আঞ্চলিক পরিচালক ইব্রাহিম আখন্দ’র নেতৃত্বে সহকারি পরিচালক আব্দুল মালেক, অনুষ্ঠান সংগঠক গোলাম কবির ও কাজী মাহমুদুর রহমান এবং অনুষ্ঠান প্রযোজক সামছুর আলী বিশ্বাস ও মুন্সি আহসান কবীর; শিল্পী সংগ্রহ থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় নতুন নতুন সৃষ্টির আনন্দে দিন-রাত এক করে ফেলতেন। অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে পরে এসে যোগ দিয়েছিলেন আব্দুস সাত্তার শেখ ও শেখ ওয়ালিউর রহমান। সংবাদ অনুবাদক ও পাঠক লিয়াকত আলী, আহমদ আলী খান ও হুমায়ুন কবির বালু, সঙ্গীত প্রযোজক আব্দুল হালিম চৌধুরী, সৈয়দ নুরুল ইসলাম মুফতি ও আব্দুল মজিদ এবং নাট্য প্রযোজক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন নানা সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে অনুষ্ঠানের মান শ্রোতাপ্রিয় করতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় মগ্ন থাকতেন। খুলনা বেতারের প্রথম ট্রান্সমিটার ছিল ১০ কিলোওয়াট শক্তি বিশিষ্ট।

কবি জসিমউদ্দিনের ‘পদ্মাপার’ নাটকের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল খুলনা বেতারের নাটক বিভাগ। সেই সত্তর দশক থেকেই খুলনা বেতারের নাটক অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন ধারার নাটকের মধ্য দিয়ে খুলনা বেতারের নাটক বিভাগ সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। তৎকালীন সময়ের পরিচিত একটি নাম বিমল মজুমদার। তাঁর রচিত ‘চৌকিদার’ নাটকটি সেসময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল।

প্রায় ৪০ জন সঙ্গীত শিল্পী আর ২০ জন নাট্যশিল্পী নিয়ে খুলনাবাসীকে নির্মল আনন্দ দেয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্র। কথকও ছিলেন মুষ্টিমেয় কয়েকজন। অনুষ্ঠান ঘোষণায় ছিলেন রেহানা আখতার, সুরাইয়া বেগম ও জহির শমসেরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আহসান আরা রুমী, জেবুন্নেসা বেগম, সেলিনা বিলকিস আনার, শেখ আব্দুস সালাম, শেখ বজলার রহমান, শাহ্ মোহাম্মদ ইয়াসীন ও শাম্মী আখতার। যন্ত্র সঙ্গীতে ছিলেন শেখ আলী আহম্মেদ, দুলাল চন্দ্র শীল, ফজলে আকবর, মোঃ সাদ্তকী ও আব্দুল মজিদ।

উদ্বোধনের তিন মাসের মধ্যেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ১৫ ও ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১-এ পরাজয়ের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী সারা খুলনা জুড়ে চালায় নারকীয় হত্যা আর ধ্বংসযজ্ঞ। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সেতু, কালভার্টসহ তারা খুলনা বেতারের ট্রান্সমিটার, স্টুডিও, যন্ত্রপাতি, টেপ, নথিপত্রসহ সবকিছুই ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংস করে ফেলে। স্তব্ধ হয়ে পড়ে খুলনা বেতার। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর গল্লামারির বেতার কেন্দ্র সচল রাখতে রংপুর বেতার কেন্দ্র থেকে ১ কিলোওয়াট শক্তির অস্থায়ী একটি ট্রান্সমিটার সংস্থাপন করা হয়। নবযাত্রা শুরু হয় ১৯৭৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। শুরু হয় ঢাকা কেন্দ্র থেকে অনুষ্ঠান সম্প্রচার। মাত্র মাস খানেকের ভেতর নিজের দক্ষতা আর সক্ষমতা তৈরি করে ফেলে খুলনা বেতার।

২৬শে মার্চ ১৯৭৩। খুলনা বেতার থেকে প্রচার শুরু হয় ৫৫ মিনিটের নিজস্ব অনুষ্ঠান। চারপাশের প্রশংসা, মূল্যায়ন এবং বেতারের দায়বদ্ধতা থেকে নিজস্ব অনুষ্ঠানের প্রচার সময় আরো দীর্ঘ করা হয়। ৫৫ মিনিট থেকে নিজেদের অনুষ্ঠান প্রচারের সময় বৃদ্ধি করে ৪ ঘন্টা করা হয়। সেসময় খুলনা বেতারের শ্রবণ এলাকা ছিল ১০ মাইলের মধ্যে। ৭৫ এ আরো ১০ কিলোওয়াট শক্তির ট্রান্সমিটার সংযোজনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯শে এপ্রিল ১৯৭৬। ১০ মাইলের শ্রবণ এলাকা পেরিয়ে ৩৫ মাইলের পরিধিতে শ্রোতার কানে পৌঁছায় খুলনা বেতারের আয়োজন। যে শব্দ তরঙ্গের যাত্রা শুরু হয়েছিল সত্তরের ডিসেম্বরে, প্রচার এলাকা বৃদ্ধিতে তা আরো পরিণত ও শাণিত হয়।

১লা জুলাই ১৯৭৯। সর্বাধুনিক ব্রডকাস্টিং হাউজ হিসেবে খুলনার বয়রায় গড়ে ওঠে বাংলাদেশ বেতার কর্তৃক নির্মিত ৪টি স্টুডিও সম্বলিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ বেতার ভবন। খুলনা বেতার থেকে প্রতিদিন প্রচারিত হতে থাকে ইতিহাস ভিত্তিক আলোচনা, পরিবেশ, বেপরোয়া প্রকৃতি, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, মানবিক সমাজ, বাণিজ্যিক জীবন, দৃষ্টিপাত ও স্বাস্থ্যের মানচিত্র। পরিকল্পিত নির্মাণ কাঠামোতে, শ্রোতাদের চাহিদা অনুযায়ী নিখুঁতভাবে অনুষ্ঠান তৈরি করা হয়। আয়োজনের আবশ্যিক উপাদান হিসেবে খেলা, তারুণ্য, বিজ্ঞান, কৃষির তত্ত্বতালাশ প্রচার করা হয়। সম্প্রচার করা হয় নারীর অন্দরমহলের ক্যানভাস ও শিশুদের আগামির মঞ্চকথা।

নওয়াপাড়ায় ১০০ কিলোওয়াটের ট্রান্সমিটার খুলনা বেতারের এসব অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ১৯৮১ সালের ২৮শে এপ্রিল থেকে। বর্তমানে মধ্যম তরঙ্গ ও এফ. এম ৮৮.৮ মেগাহার্জ তরঙ্গ সবমিলিয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ব্যাপ্তি ৫০ ঘন্টা ৫০ মিনিট। যে সংস্কৃতি জীবন নির্মাণ করে তার বিরামহীন সম্প্রচারে, দিনে দিনে শ্রোতাদের আগ্রহের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে যায় খুলনা বেতার।

স্বাধীনতার পর চৌকস অফিসারসহ এক ঝাঁক গুণী মানুষ যোগ দেন খুলনা বেতারে। অনুষ্ঠানে আসে নতুনত্ব। প্রত্যেকের কন্ঠেই বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য্য। সঙ্গীত, নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, প্রামাণ্য অনুষ্ঠানের অতুলনীয় নির্মাণশৈলী, স্বর্ণালী সে সময়গুলোতে খুলনা বেতারকে দিয়েছিল ভিন্ন মাত্রা। অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে উঠেছিল খুলনা বেতারের অনুষ্ঠানমালা। ‘এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা সুরমা নদী তটে’, ‘তোমরা ভুলেই গেছ মল্লিকাদির নাম’ কিংবা ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিধিল গায়ে’সহ-একের পর এক অসংখ্য জনপ্রিয় গান সেসময় সৃষ্টি হয়েছিল খুলনা বেতারে। খুলনা বেতারের অনুষ্ঠানকে তখন সমৃদ্ধ করেছেন আবু জাফর, ফরিদা পারভীন, খালিদ হাসান মিলু, শাম্মী আকতার, আব্দুস সবুর খান চৌধুরী, লায়লা বিলকিস খান চৌধুরী, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, কামাল মাহমুদ, লুৎফুন নাহার লতা, সৈয়দ আব্দুল মতিন, সাধন ঘোষ, সাধন সরকার, শেখ আফজাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক, মোর্তজা আহমেদ বাবু, বীণা মজুমদার, শেখ হাসান আলী, মোঃ আকরামুজ্জামান, নাসিরুজ্জামান, অশোক কুমার দে প্রমূখ।

নব্বই এর দশকের শেষদিকে উপ পরিচালক সামছুর আলী বিশ্বাস তুলে আনলেন বিপ্লব রহমান, বদরুদ্দোজা আলমাজী, সাঈদুর রহমান, নাজমুল হক লাকি, মারজুক রাসেল, তৌহিদ হাসান ফারুকী, নাহিদ সুলতানা, প্রিয়াংকা বিশ্বাস, জান্নাতুল পিয়া, প্রমিত হোসেন, বাপ্পী আশরাফসহ আরো কিছু প্রতিভাবান তরুণ-তরুণীকে। যারা সৃষ্টি সুখের উল্লাসে একের পর এক নির্মাণ করেছেন বৈচিত্র্যে ভরা অলংকারসমৃদ্ধ অনুষ্ঠানমালা। জাতীয় পর্যায়ে এখনও তাঁরা অবদান রেখে চলেছেন।

খুলনা বেতারের নিরন্তর এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস-বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ আর রুচিশীল বিনোদনের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে স্থানীয় সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নিত্য নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে খুলনা বেতারের সংবাদ বিভাগ। ৫টি বাংলা ও ১ টি ইংরেজি সংবাদ বুলেটিন স্থানীয়ভাবে প্রচারিত হচ্ছে। খুলনা বেতার সবসময়ই নির্মাণ করে সময়োপযোগী অনুষ্ঠানমালা। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতাবোধে উজ্জ্বীবিত করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠান ‘স্বাধীনতা আমার অহংকার’, প্রতিদিনের সংবাদপত্রের পর্যালোচনা নিয়ে অনুষ্ঠান ‘সমাচার’ ছাড়াও রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্রান্ডিং অনুষ্ঠান ‘শেখ হাসিনার দশ উদ্যোগ’ ও এস ডি জি বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশ’-এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খুলনা বেতার বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির সর্বশেষ তথ্য মুহূর্তেই পৌঁছে দিচ্ছে প্রান্তিক মানুষের কাছে।

ইতিহাসের সাক্ষী খুলনা বেতার ধারণ করে আছে পাকিস্তানি সৈন্যদের দখলমুক্ত করার উদ্দেশ্যে সংগঠিত প্রতিরোধ যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে স্থাপিত স্বাধীনতা মঞ্চ ও জাতির জনকের স্মৃতি ভাস্কর্য। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে আকাশ সংস্কৃতির অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার ভেতরেও বাংলাদেশ বেতার অব্যাহত রেখেছে তার জয়যাত্রা। নতুন নতুন উদ্ভাবনের ভেতর দিয়ে খুলনা বেতারও দৃঢ় প্রত্যয় ধরে রেখেছে তার গৌরবময় অভিযাত্রায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে লাখ লাখ শ্রোতার কাছে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে খুলনা বেতারের পরিবেশনা। দেশপ্রেম ও শুদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে খুলনা বেতারের অগ্রপথিকের ভূমিকার স্বীকৃতিও মিলেছে ২০১৩ সালে খুলনার মেয়র পদক অর্জনের মাধ্যমে। ৪র্থ জাতীয় উন্নয়নমেলা ২০১৮তে খুলনা বেতারের দৃষ্টিনন্দন স্টল ও তাৎক্ষণিক সেবায় মুগ্ধ আয়োজক কমিটি খুলনা জেলা প্রশাসন প্রদান করেছে সেরার পুরষ্কার। এছাড়া সহকারি পরিচালক মামুন আকতার-এর নির্মিত অনুষ্ঠান ‘তরুণোদয়’ এর মাধ্যমে মিলেছে জাতীয় জনসংখ্যা পুরষ্কার। কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ বশির উদ্দিনের শুদ্ধাচার পুরষ্কার প্রাপ্তি গৌরবান্বিত করেছে বেতার সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি ধারণ করে গৌরবময় পরিচয় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে খুলনা বেতার। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার প্রশ্নে গণমাধ্যমের ভূমিকার জায়গাটুকুতে প্রাণান্ত তৎপর খুলনা বেতার।

মুক্তিযুদ্ধে খুলনা বেতার কেন্দ্রের অবদান: অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে খুলনা বেতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে খুলনা বেতার রেডিও পাকিস্তান নামটি বর্জন করে স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। কড়া পাহারা আর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও খুলনা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধিকার আন্দোলনের স্বপক্ষে গান, কবিতা, সংবাদ, কথিকা প্রচারিত হতে থাকে এবং পাকিস্তান জিন্দাবাদ-এর পরিবর্তে জয় বাংলা ধ্বনি প্রচার শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গল্লামারির নির্জন বিল এলাকায় যে গণহত্যা সংগঠিত হয় খুলনা বেতার তার নীরব সাক্ষী। ২৫শে মার্চ একাত্তরে গল্লামারি বেতার ভবনের পুলিশ ব্যারাক পাকিস্তানি সৈন্যরা দখল করে নেয় এবং সেখানে ঘাঁটি স্থাপন করে আশপাশের গ্রামগুলি জ্বালিয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ন’মাস বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়ে বাংলাদেশে যে অসংখ্য বধ্যভূমি সৃষ্টি করেছিল খুলনার গল্লামারী তার অন্যতম। প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে অসংখ্য বন্দীকে আনা হতো গল্লামারীতে। খালের পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে তাদের হত্যা করা হতো। এরপর তারা আর গুলি খরচ করতো না। ট্রাক বোঝাই বন্দীদের সাথেই নিয়ে আসতো দু’তিনজন বিহারী কসাই। জল্লাদরা বন্দীদের জবাই করে খালের পানিতে ফেলে দিত। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের মতো খুলনা বেতার দখল করে মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান টুকুর নেতৃত্বে একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল গল্লামারীর বেতার কেন্দ্রে হামলা করে। কিন্তু বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় পাকিস্তানি সেনাদের পাল্টা হামলায় সেদিন ৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং মু্িক্তযোদ্ধাদের অভিযান ব্যর্থ হয়। বেতার কেন্দ্র দখলের এই সম্মুখ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল আবেদীন, মোঃ মোসলেম আলী ও মোঃ হাবিবুর রহমান বেতার প্রাঙ্গণে শহীদ হন।

স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশে খুলনা বেতারের অবদান: সমৃদ্ধ সংস্কৃতিতে ঋদ্ধ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনা। এখানে যেমন আছে লালনের গান, বিজয় সরকারের গান, পাঞ্জু শাহ্’র গান, বাউয়ালীদের গান, পালকির গান, ধুয়া গান, ভাসান গান, ছাদ পেটানোর গান, পটগান, অষ্টক গানের মত ঐতিহ্যমন্ডিত লোকজ সংস্কৃতি, তেমনি আছে ঐতিহ্য থেকে আধুনিকতার পথে নিরন্তর যাত্রা। ঐতিহ্য থেকে আধুনিকতার এ অগ্রযাত্রায় বহতা নদীর মতই ভূমিকা রেখে চলেছে খুলনা বেতার। খুলনা বেতারের গোষ্ঠীভিত্তিক অনুষ্ঠানে গান, নাটক, কথিকাসহ অন্যান্য পরিবেশনায় প্রাধান্য পায় অঞ্চলভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। আর এই সংগঠনগুলোকে প্রতিনিয়ত অনুষ্ঠান পরিকল্পনার মধ্যে রেখে উজ্জীবিত করার মাধ্যমে খুলনা বেতার প্রকারান্তরে নতুন নতুন শিল্পী তৈরিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।