ডুমুরিয়ায় গৃহবধু টুম্পা মন্ডল হত্যা মামলায় স্বামীসহ তিনজনের ফাঁসির আদেশ

2
Spread the love

খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে

স্টাফ রিপোর্টার

খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় থানার বাদুড়গাছা গ্রামের গৃহবধু টুম্পা মন্ডল (২৫) হত্যা মামলায় ৩০২ ধারায় স্বামীসহ তিনজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- ও প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। এছাড়া মামলার ২০১ ধারায় প্রত্যেককে ৭ বছর কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার জেলা ও দায়রা জজ মশিউর রহমার চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেছেন।

ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন টুম্পার স্বামী ডুমুরিয়ার সেনপাড়া গ্রামের

পরিমল গাইনের ছেলে প্রসেনজিৎ গাইন (২৭), একই গ্রামের অনাদি গাইনের ছেলে অনিমেষ গাইন (২৫) ও  কৈ পুকুরিয়া গ্রামের বিনয় মন্ডলের ছেলে বিপ্লব কান্তি মন্ডল (৩২)। রায় ঘোষণাকালে আসামি অনিমেষ গাইন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন এবং প্রসেনজিৎ গাইন ও বিপ্লব কান্তি মন্ডল পলাতক রয়েছেন। মামলার অপর আসামি ডুমুরিয়ার সেনপাড়া গ্রামের পরিমল গাইনের  ছেলে ও  প্রসেনজিৎ গাইনের ভাই সুদাশ গাইন (২৯) কে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী মনসুর আহমেদ মেহেদী নথীর বরাত দিয়ে জানান, ২০১৫ সালের ৬ জুলাই প্রসেনজিৎ নোটারী পাবলিক এ্যাফিডেভিডের কার্যালয়ে ডুমুরিয়ার চন্ডিপুর গ্রামের সুরঞ্জন মন্ডলের মেয়ে  টুম্পা মন্ডলকে বিয়ে করে। এরপর প্রসেনজিৎ স্ত্রী টুম্পাকে সেনপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলে পরিবারের লোকজন তাকে মেনে নেয়নি। তারপরও প্রসেনজিৎ তাকে নিয়ে নিজ বাড়িতেই বসবাস করতে থাকে। কিছুদিন পর থেকে প্রসেনজিৎ টুম্পাকে যৌতুক হিসেবে পরিবার থেকে নগদ টাকা এনে দিতে বলে। টুম্পা তাতে অস্বীকৃতি জানানোর পর থেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এরপর টুম্পা বাদী হয়ে স্বামী প্রসেনজিৎ গাইন, শশুড় পরিমল গাইন ও শাশুড়ি কবিতা গাইনের বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। মামলা তুলে নিতে বললে টুম্পা স্বামী প্রসেনজিৎকে জানায় পুত্রবধু হিসেবে মেনে নিলে ও যৌতুকের টাকা দাবি না করলে সে মামলা তুলে নিবে। পরে টুম্পার সাথে মোবাইল ফোনে সবসময় যোগাযোগ করতো প্রসেনজিৎ। টুম্পাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে পরিকল্পনা করে। ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে পূজা দেখানোর কথা বলে টুম্পাকে কৌশলে নিয়ে যায়। ৭নং শোভনা ইউনিয়নের অন্তর্গত বাদুড়গাছা গ্রামের মাঠ মন্দিরের পূর্বপাশে ঘ্যাংরাইল নদীর পাড়ে বসে দুই জনের মধ্যে মামলা উঠানো নিয়ে তর্ক বিতর্ক হয়। প্রসেনজিতসহ আসামীরা টুম্পাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পানির তলদেশে ডুবিয়ে দেয়। ওই দিন রাত ৯টায় ভিকটিমের পরিবার তাকে কল করলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পায়। সর্বশেষ ৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টায় ঘ্যাংরাইল নদীর পশ্চিম কিনারা থেকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। পরে নিহতের স্বজনরা টুম্পার লাশ বলে সনাক্ত করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই সমিত মন্ডল ডুমুরিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন যার নং-৫। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই  মো. খায়রুল ইসলাম ও এসঅই কেরামত আলী ৪জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলায় ২৮জনের মধ্যে ২৬জন সাক্ষ্য প্রদান শেষে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক এরায় ঘোষণা করেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলী ছিলেন জেলা পিপি শেখ এনামুল হক।