সম্রাট শেখ
খুলনা শহরের ব্যস্ততম এলাকা গল্লামারি বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশে ময়লার স্তূপ ফেলার কারণে পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ময়লার দুর্গন্ধে এলাকাবাসীর জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপরও।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, গল্লামারি বাজারের পাশে মোহাম্মদনগর মোড় এলাকায় প্রতিদিনই ময়লা ফেলা হয়। সড়কের পাশে জমে থাকা ময়লাযুক্ত পানি ও ময়লার দুর্গন্ধে স্থানীয়রা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। ব্যস্ততম এই সড়কে যানজটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। আশপাশের বাসিন্দারা প্রতিদিনই অসহনীয় দুর্গন্ধে ভুগছেন এবং এতে শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষ নানান শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেকে ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা, বমিভাবসহ বিভিন্ন জলবাহিত ও সংক্রামক রোগে ভুগছেন।
কয়েকজন স্থানীয় দোকানদার বলেন, “ময়লার গন্ধে দোকানে বসা যায় না। খাওয়ার সময় বমি চলে আসে।” অন্য পথচারীরা জানান, ‘আমাদের দুর্ভোগ কেউ চোখে দেখে না এবং চলাফেরা করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।’
স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষকে ময়লার স্তূপ অপসারণ এবং নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলছেন। তবে কর্তৃপক্ষ বারবার পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও, এ পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
অপরদিকে, ময়লার স্তূপে জমে থাকা স্থবির পানিতে জন্ম নিচ্ছে নানা প্রজাতির মশা, যা থেকে এডিস ও চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতি শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্য নয়, পরিবেশের জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরিকল্পিতভাবে এই এলাকায় ময়লা ফেলার ফলে বায়ু, পানি ও মাটির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পচনশীল বর্জ্য থেকে নির্গত গ্যাস ও তরল পদার্থ আশপাশের বাতাস ও পানির উৎসকে দূষিত করছে, যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন এভাবে বর্জ্য জমে থাকলে এলাকার প্রাণবৈচিত্র ও জনস্বাস্থ্য উভয়ই ঝুঁকির মুখে পড়বে।
খুলনা বিভাগের ডেপুটি সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান জানান, ময়লা থেকে জন্ম নেওয়া মশা ও মাছি যদি খাবারের ওপর পড়ে, তবে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরা ও ম্যালেরিয়ার মতো সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে। তিনি আরও বলেন, ময়লার স্তূপে জমে থাকা পানিতে সহজেই এডিস মশার প্রজনন ঘটে, যা থেকে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া, ময়লার দুর্গন্ধ যদি মানুষের শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে, তাহলে তা অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, বদহজম, আলসার ও বমির মতো বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা’র খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, “অপরিকল্পিতভাবে এখানে ময়লা ফেলার কারণে বায়ু, মাটি ও পানি—সবকিছুই দূষিত হচ্ছে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আমরা এ বিষয়ে ইতোমধ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করেছি। সিটি কর্পোরেশনকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।”
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান জানান, গল্লামারির যে স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে, সেটি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আওতার বাইরে। এলাকাটি বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখানে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার এখতিয়ার নেই।
এ বিষয়ে বটিয়াঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে জায়গাটি পরিদর্শন করেছি এবং বাজার কমিটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ময়লা ফেলার স্থানটি অন্য কোথাও স্থানান্তর করা যায় কি না, সে বিষয়ে আমরা কয়েকটি বিকল্প জায়গা নির্ধারণের চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গেও আমাদের আলোচনা চলছে।”
সাধারণ নাগরিকরা অভিযোগ করেছেন, বছরের পর বছর ধরে ময়লার স্তূপটি এভাবে পড়ে আছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মনযোগ দেননি।










































