ঝিনাইদহের গ্রামটি এখন ‘পাখির গাঁ’

9
Spread the love


খুলনাঞ্চল রিপোর্ট।।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আশুরহাট গ্রামে দলে দলে এসে ভিড় করছে পাখি। শামুকখোল, পানকৌড়ি আর সাদা সারস। কেউ বাসা বানাচ্ছে, কেউ ডিমে তা দিচ্ছে, কেউ আবার ছানা লালনপালন করছে। প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিবছর শীত মৌসুমে পাখিরা এসে এই গ্রামকে সাজিয়ে তোলে। ধীরে ধীরে গ্রামটি পরিচিতি পাচ্ছে ‘পাখির গাঁ’ হিসেবে।

তবে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাটি পাখিদের অভয়াশ্রম ঘোষিত না হওয়ায় নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এখানে যেসব গাছে পাখিরা বাসা বাঁধে, সেগুলো দুটি পুকুরপাড়ে। গাছের নিচ দিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষের যাতায়াত। পাখির বিষ্ঠায় পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়েন। প্রায় ৪ একর জলাশয়ের দুটি পুকুরে পাখির বিষ্ঠার কারণে মাছ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেক মাছ পাখি খেয়েও ফেলছে। এতে পুকুরের মালিকদের মধ্যে বাড়ছে অসন্তোষ। তবু এখানে পাখি দেখতে প্রতিবছর ভিড় জমান দর্শনার্থীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সালের শীত মৌসুমে প্রথম এখানে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। পাখিগুলো গ্রামের আবদুর রাজ্জাক ও গোপাল বিশ্বাসের দুটি পুকুরপাড়ে থাকা গাছগুলোয় বাসা বাঁধে। বছর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকে। আশপাশের এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়লে মানুষ দলবেঁধে আসতে শুরু করে পাখি দেখতে। পরে দোকানপাট বসে, চলে পাখির মেলা।


প্রশাসনেরও একসময় নজর পড়ে এই এলাকায়। খুলনা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগ স্থানটিকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে ওঠে স্থানীয় পাখি সংরক্ষণ সমিতি। তবে ২০১৭ সালে কমিটি গঠনের পর থেকে সরকারি সহযোগিতা মেলেনি।


পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ বছর এখানে প্রায় ১০ হাজার পাখি এসেছে। চোরা শিকারিদের হাত থেকে পাখিদের রক্ষা, অসুস্থ পাখির যত্ন, ছানাদের পাহারা—সবই তাঁরা নিজেরা করছেন। সরকারিভাবে এখানে বসার স্থান ও একটি টিউবওয়েল নির্মাণের কাজ শুরু হলেও তা শেষ হয়নি। তাঁরা প্রশাসনের কাছে বারবার এলাকাটি অভয়াশ্রম ঘোষণার দাবি জানালেও বাস্তবায়ন হয়নি। সমিতির ২০ জন সদস্য নিয়মিত পাহারা দেন। তবে এ কাজে তাঁদের বেশ কিছু টর্চলাইট ও সঠিক প্রশিক্ষণ জরুরি। অসুস্থ পাখির চিকিৎসার ব্যবস্থাও তাঁরা করতে পারেন না। এ কারণে প্রতিবছর বেশ কিছু পাখি মারা যায়।

এলাকার মানুষও অভয়াশ্রম ঘোষণার দাবি তুলেছেন। তাঁদের মতে, পুকুরের জমি অধিগ্রহণ করে সরকারিভাবে সংরক্ষিত ঘোষণা করলে পাখি যেমন নিরাপদে থাকবে, তেমনি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবেও এলাকাটি গড়ে উঠবে।


খুলনা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য্য জানান, সরকারিভাবে এ স্থানকে পাখি কলোনি করার জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা আছে। এক পুকুরমালিক আবদুর রাজ্জাক জমি দিতে রাজি হলেও আরেক পুকুরমালিক গোপাল বিশ্বাসের সন্তানেরা রাজি হননি। এ কারণে বিষয়টি আটকে আছে। এ ছাড়া পাখিদের সুরক্ষায় ইতিপূর্বে আনসার ক্যাম্প করা হলেও বর্তমানে সেটি নেই বলে জানান তিনি।


জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে গোপাল বিশ্বাসের ছেলে গৌতম বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস বলেন, জেলা পরিষদের উদ্যোগে বসার জায়গা, টিউবওয়েল ও টয়লেট নির্মাণের বিষয়ে খোঁজ নেবেন। তবে পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণার বিষয়ে আপাতত কোনো উদ্যোগ নেই।