সরগরম সুপারির বাজার, দামে খুশি চাষি-ব্যবসায়ীরা

66
Spread the love


বাগেরহাট প্রতিনিধি


নারকেল ও সুপারির জন্য প্রসিদ্ধ জেলা বাগেরহাট। তবে বিভিন্ন কারণে দিন দিন জেলার প্রধান দুই অর্থকরী ফসলের ফলন কমে যাচ্ছে। এ বছর জেলায় সুপারির মৌসুমেও আশানুরূপ সুপারি উৎপাদন না হলেও করোনাকালীন সময়েও জেলার বিভিন্ন বাজারে সুপারি ক্রয়-বিক্রয় জমে উঠেছে। দামও বেড়েছে কুড়িতে (২৩১টি) ২০০-৩০০ টাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্পানের কারণে সুপারির ফলন কম হলেও দামে খুশি গৃহস্থরা। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থকরি ফসল সুপারির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন এলাকাবাসী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দাবি উপজেলার সীমান্তে তালেশ্বর সুইচ গেট থেকে লবনাক্ত পানি প্রবেশ বন্ধ করা গেলে সুপারির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
বাগেরহাটের কচুয়ায় সরগরম সুপারির হাটে গিয়ে দেখা যায়, হরদম কেনা-কাটা চলছে সুপারির। প্রতি কুড়ি সুপারি আকার ভেদে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বিক্রেতা ও ক্রেতার সমাগম চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান, নছিমন, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে গৃহস্থরা সুপারি নিয়ে আসছেন এই হাটে। সুপারির পাইকাররা সুপারি ক্রয় করে নিজেদের গদিতে (ভাড়া করা ঘর) স্তুুপ করে রাখছেন। এখান থেকে সুপারি আবার বাছাই এবং চূড়ান্ত গণনা করে বস্তা ভর্তি করতে কাজ করেন শতাধিক শ্রমিক। সাপ্তাহিক এই হাটে কোটি টাকার উপরে সুপারি বিক্রি হয়। হাটের দিনে প্রায় অর্ধশতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী সুপারি ক্রয় করেন। এদের সহযোগী হিসেবে শতাধিক মানুষ কাজ করেন এখানে। এই সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, দিনাজপুরসহ প্রায় ২০টি জেলায় যায় এই সুপারি। শুধু বৃহস্পতিবার নয় সোমবারও কচুয়ায় বাজারে একই পরিমাণ সুপারি বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও উপজেলার বাধাল, তালেশ্বর, টেংড়াখালি, গজালিয়া বাজারেও সুপারি বিক্রি হয়। কচুয়া উপজেলায় ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয় বছরে। কচুয়া ছাড়াও জেলার মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর উপজেলায় বেশ সুপারি উৎপাদিত হয়। ফকিরহাট, চিতলমারীসহ অন্য উপজেলায়ও সুপারি উৎপাদিত হয়। তা পরিমাণে নগন্য। সব মিলিয়ে বাগেরহাট জেলায় ৪ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৬ হাজার টন সুপারি উৎপাদিত হয়।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের সুপারি বিক্রেতা তারক বৈরাগী বলেন, আমরা এক সময় প্রচুর পরিমাণ সুপারি পেতাম। কিন্তু এ বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সুপারির মঞ্জুরি (ফুল) পড়ে যাওয়ায় এবার আমাদের সুপারি কম হয়েছে। তবে এবার দাম বেশি হওয়ায় পুষিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর যে সুপারির দাম থাকবে তাতো নয়। এজন্য সুপারির উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করা উচিত।

কচুয়া উপজেলার পদ্মনগর গ্রামের সালাম শেখ, লতিফ, আবুল হোসেন, নুরুসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের এলাকাটা ছিল মিষ্টি পানির। একারণে সুপারির ফলন ভাল হতো। বর্তমানে খালগুলে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ত পানি প্রবেশ করায় সুপারির উৎপাদন কমে গেছে।

সুপারি গণনা ও বাছাই কাজে নিয়োজিত শ্রমিক শহিদ, ইউনুস ও মোবারেক বলেন, সপ্তাহে দুইদিন এই কাজ করার সুযোগ পাই। ফজরের নামাজ পরেই হাটে চলে আসি রাত ১০টার সময় বাড়িতে যাই। এক কুড়ি সুপারি বাছাই শেষে গণনা করে বস্তাায় ঢুকালে আমরা পাই ৫ টাকা। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬শ’ টাকা আয় হয় আমাদের। সুপারির মৌসুমে এই করেই আমাদের সংসার চলে।

কচুয়া বাজার সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নারায়ন বাওয়ালী বলেন, আমরা এই সুপারি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকি। কিছু সুপারি মদাই (৬০-৭৫ দিন পানিতে ভিজিয়ে উঠানো হয়) এবং কিছু সুপারি শুকানোও হয়। সুপারির মৌসুম শেষে মদা ও শুকনো সুপারিরও চাহিদা রয়েছে। আমরা মোটামুটি এই বাজারে সুষ্ঠভাবে ব্যবসা করে থাকি।

কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার হাদিউজ্জামান বলেন, আমাদের কচুয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারির উৎপাদন হয়। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় এই সুপারি রপ্তানি হয়। এই এলাকার প্রত্যেকটা পরিবারের সুপারির গাছ রয়েছে। সুপারি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে সুপারি গাছের যতœ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া কথা বলেন তিনি।

কচুয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোছা. লাভলী খাতুন বলেন, কচুয়া উপজেলায় আঠারো হাজার কৃষক সুপারির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। এবার ঝড় ও লবনাক্ততার কারণে সুপারির উৎপাদন কমে গেছে। তবে যদি কচুয়া উপজেলার সীমান্তে তালেশ্বর সৃুইজ গেট থেকে লবনাক্ত পানি প্রবেশ বন্ধ করা যায় তাহলে সুপারির উৎপাদন বাড়বে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জয় দাস বলেন, সুপারি এবং নারকেলের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রসিদ্ধ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন কারণে সুপারির উৎপাদন কমে গেছে। সুপারির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাগান কুপিয়ে গোবর সার দেওয়া যেতে পারে। এজন্য আমরা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।