ছায়া তদন্তে বিভিন্ন সংস্থা, সাংবাদিক বুলুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের আশা নৌ-পুলিশের

72
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার।।

খুলনায় জৈষ্ঠ সাংবাদিক ওহেদ-উজ-জামান বুলুর (৬০) রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি একাধিক গেয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃংখলার দায়িত্বে নিয়োজিত র‌্যাব, পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। নৌ-পুলিশ বলছে- আগামীকাল বুধবারের মধ্যে এটি হত্যা না আত্মহত্যা পরিস্কার হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে গতকাল সোমবার প্রয়াত সাংবাদিক বুলুর ভাই আনিসুজ্জামান দুলু বাদী হয়ে লবনচরা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (নং ২০) দায়ের করার পর জোরেসোরে তদন্ত শুরু করেছে নৌ-পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ পুলিশ পরিদর্শক আবুল খায়ের শেখ বলেন, বিভিন্ন কারণ সামনে রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। এরমধ্যে পারিবারিক সমস্যা, অর্থ লেনদেন বিষয়গুলো সামনে রেখে আমরা এগোচ্ছি। তিনি জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বুলুর বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া দ্বিতীয় স্ত্রী তানিয়া সুলতানা ফোন করেছিল। আজ মঙ্গলবার তার আসার কথা থাকলেও তিনি ফোন ধরছেন না।

তিনি জানান, বুলু ব্রিজের ৬০-৭০ ফুট উচু থেকে পড়ে যাওয়ায় তার মুখ থেতলে গেছে। এছাড়া তার মাজা ও পা ভেঙ্গে গেছে। আমরা প্রতিটি বিষয় চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এগোচ্ছি।

খুলনা নৌ পুলিশের এসপি ডাঃ মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। সাংবাদিক বুলুকে রূপসা ব্রীজ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে কিনা বা তিনি নিজে লাফ দিয়েছেন কিনা এটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া উদ্ধারকৃত বুলুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন লক ছিল। সেটি খোলা হয়েছে। এখন কল লিষ্ট পরীক্ষা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, একটু সময় দেন, আশাকরি আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে একটা রেজাল্ট আপনাদের দিতে পারবো।

এদিকে আজ মঙ্গলবার নৌ পুলিশের এসপি অফিসে আসেন প্রয়াত সাংবাদিক ওহেদ-উজ-জামান বুলুর ভাই ও মামলার বাদী আনিসুজ্জামান দুলু, বুলুর মামা নাজমুল ইউসুফসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাদের সাথে কয়েক ঘন্টা কথা বলেন এসপি ডাঃ মঞ্জুর মোর্শেদ।

সেখান থেকে বেরিয়ে তারা আবারও বলেন, সাংবাদিক বুলুর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। আমরা জানতে পেরেছি যে- কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী তানিয়া সুলতানা জোর করে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা নিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন। ওই সময় তানিয়া নাকি তিন মাসের অন্তঃসত্বা ছিলেন। তাহলে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে- অন্তঃসত্তা থাকা অবস্থায় কিভাবে বিচ্ছেদ হয়। এটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

এছাড়া আমরা জানতে পেরেছি যে- বুলু ২৫ লাখ টাকা ব্যাংকে এফডিআর করে রেখেছিল। ওই টাকা উঠিয়ে বেসরকারী সামি নামের একটি হাসপাতালে (ক্লিনিক) বিনিয়োগ করে। নগরীর কেডিএ মজিদ স্মরণীর মোল্লা বাড়ির মোড়ে অবস্থিত ওই ক্লিনিকের মালিক ছিলেন সেলিম নামের এক ব্যবসায়ী। গত বছরের ৫ আগষ্টের পর সেলিম আত্মগোপনে চলে যান এবং কিছুদিন পর ওই ক্লিনিকটি দেড় কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন। কিন্তু বুলুর পাওনা ২৫ লাখ টাকা আর ফেরত দেননি।

পরিবার আরো জানায়, পারিবারিক কলহের কারণে তার প্রথম স্ত্রী এলিজা পারভীন গত ১১ মে সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। অদ্যাবধি তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। অর্থ সংকট, পারিবারিক অশান্তির কারণে বুলু খুবই বিপর্যস্ত ছিলেন।

সূত্র জানায়, সব হারিয়ে মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে বেশ কিছুদিন আগেও একবার খুলনা রেল ষ্টেশনে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছলেন বুলু। তখন স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

উল্লেখ্য গত রোববার (৩১ আগষ্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে খুলনার খানজাহান আলী (রহ:)-রূপসা সেতুর ২ নম্বর পিলারের বেজমেন্ট থেকে খুলনার জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলু’র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক বুলু দৈনিক বঙ্গবাণী পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ, চ্যানেল ওয়ান, ইউএনবি ও দৈনিক প্রবাহ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি খুলনা প্রেসক্লাব ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে) ও বিএফইউজে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন।