Home Lead এবার এসিল্যান্ড তাহমিদার নেতৃত্বে জনতাকে কান ধরানো-মারপিট
খুলনাঞ্চল রিপোর্ট:
যশোরের মণিরামপুরের এসিল্যান্ডের ভ্রাম্যমাণ
আদালত পরিচালনার বিতর্কের মধ্যেই এবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদা আক্তার। তার পরিচালনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে
জনসাধারণের ওপর লাঠিচার্জ, ধাওয়া করে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি
সৃষ্টির তিন মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য
করেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে এসিল্যান্ড অফিসের অফিস সহায়ক মো. সাইফুল ইসলাম লাঠি
হাতে নিয়ে একাধিক লোককে পিটুনি, কানে ধরানো এবং ধাওয়া করতে দেখা যায়। প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও ভিডিওটি দেখার
পর এসিল্যান্ড তার অফিস পিয়ন কর্তৃক জনতাকে ধাওয়া করার ঘটনা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী,
সচেতন মহল ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসার ও কাবিলাসহ বেশ কয়েকটি বাজারে
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলার বুড়িচং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদা আক্তার। এসময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা না থাকায় এবং মাস্ক না পরে বাজারে ঘোরাফেরার
কারণে আটজনকে জরিমানা করেন এবং অনেককে সতর্ক করেন। কিন্তু এসময় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের
জন্য আসা সাধারণ মানুষকে পুলিশ ও এসিল্যান্ড অফিসের পিয়ন সাইফুল ইসলাম লাঠি নিয়ে ধাওয়া
করেন। একাধিক ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে পেটানো এবং এক
ব্যক্তিকে কানে ধরাতেও দেখা যায়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নামে পুলিশের
পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারীর এ ধরনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বাজারে আসা লোকজন
ও ব্যবসায়ীরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সহায়তা করেন বুড়িচং থানার এএসআই দেলোয়ারসহ সঙ্গীয় ফোর্স। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের ব্যবসায়ীরা
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘লাঠি হাতে পুলিশ ও
প্রশাসনের কর্মচারী পিটিয়ে ও মানুষকে ধাওয়া করে পুরো বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে,
এটা কেমন ভ্রাম্যমাণ আদালত?’
তারা জানান,
এলাকার সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য বাজারে
এসেছিল। কিন্তু বিনা উস্কানিতে পুলিশ ও সাদা গেঞ্জি পরিহিত ব্যক্তি (অফিস পিয়ন সাইফুল)
ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মানুষকে বেধড়ক পিটিয়েছে। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে ধারণকৃত
তিন মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
এইচএম নুরুল হুদা নামে একজন লিখেছেন,
‘দেশকে লকডাউন করা হয়নি যে বাসার বাইরে বের হলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর হাতে হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হতে হবে। আপনাদের দায়িত্ব মানুষকে সচেতন করা,
হয়রানি বা নির্যাতন করা নয়।’
দুরন্ত ছেলে পলাশ নামে এক আইডি থেকে লিখেছেন,
‘আঘাত পরিমাণ কি কমানো যায় না বা ভয় দেখিয়ে ঘরে পাডানো (পাঠানো)
যায় না?’
এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
ইমরুল হাসান বলেন, ‘লাঠি হাতে জনতাকে
ধাওয়া, পেটানো এবং কানে ধরার বিষয়টি আমার জানা নেই। এসিল্যান্ড ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। তিনি এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। বিষয়টি খোঁজ নেয়া হচ্ছে।’
বুড়িচং উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি তাহমিদা
আক্তার জানান, বাজারে লোকসমাগম বেশি ছিল। লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছিল। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে কানে ধরানো
এবং লাঠি হাতে ধাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বলেন, ‘সবদিকে তো আমার চোখ
রাখা সম্ভব নয়।’ পরে তার (এসিল্যান্ড) ব্যক্তিগত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে
তিন মিনিটের ভিডিওটি দেয়া হয়। ভিডিওটি দেখে বিকাল ৪টা ২৪ মিনিটের সময় অফিস পিয়ন সাইফুল কর্তৃক লাঠি ও ধাওয়ার
বিষয়টি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা শাখার
সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘এতে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে লাঠি হাতে ধাওয়া করা আইনের ব্যত্যয়। এক্ষেত্রে প্রমাণাদি দেখে তদন্তসাপেক্ষে
বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল
আহমেদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে জনসাধারণ কর্তৃক
ম্যাজিস্ট্রেট কোনোভাবে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে
নির্দেশ দিতে পারেন এসিল্যান্ড। কিন্তু কোনো কোনো কর্মচারী লাঠি দিয়ে এভাবে পেটাতে কিংবা কানে ধরাতে পারে না,
এটা বেআইনি কাজ। এর দায়ভার এসিল্যান্ড এড়াতে পারেন না।
প্রসঙ্গত, এর আগে মাস্ক না পরায় তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে শাস্তি দেয়ার ঘটনা
ঘটে। শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে যশোরের মনিরামপুর
উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ওই তিন বৃদ্ধকে এ শাস্তি দিয়েছেন যশোরের নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান। একই সঙ্গে তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে
রাখার ছবি মোবাইলে ধারণ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে
ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।