মিলি রহমান।।
রসুন আমাদের রান্নাঘরের চেনা উপাদান হলেও কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস খুব বেশি মানুষের নেই। তীব্র গন্ধ আর ঝাঁঝের কারণে অনেকে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু আপনি যদি টানা ৩০ দিন প্রতিদিন মাত্র একটি কাঁচা রসুনের কোয়া খান, তবে শরীরে কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন হতে পারে। আধুনিক গবেষণা দেখায়, কাঁচা রসুনের সালফারযুক্ত সক্রিয় উপাদান বিশেষ করে অ্যালিসিন শরীরে নানা উপকার করে থাকে। নিচে তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও সম্ভাব্য ফলাফল তুলে ধরা হলো।
কেন কাঁচা রসুন: রসুন চেপে বা কেটে রাখলে যে সক্রিয় যৌগগুলো তৈরি হয়, রান্নার সময় সেগুলোর অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাঁচা রসুনে পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি বজায় থাকে বিশেষ করে অ্যালিসিন, যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
হার্টের স্বাস্থ্য ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কাঁচা রসুন উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রক্তচাপ সামান্য কমাতে সহায়তা করতে পারে। ক্ষতিকর এলডিএল-কোলেস্টেরল কমাতেও ভূমিকা রাখে। ৩০ দিনের শেষে রক্তচাপ বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল মাত্রায় অল্প হলেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে তবে জীবনযাপনে বড় পরিবর্তন ছাড়া নাটকীয় উন্নতি আশা করা ঠিক নয়।
ইমিউন সাপোর্ট ও প্রদাহ কমানো:
রসুনে থাকা অ্যালিসিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্যের কারণে সর্দি–কাশি বা মৌসুমি সংক্রমণ কম অনুভূত হতে পারে।
হজমের উপকারিতা:
পুষ্টিবিদদের মতে, রসুনে থাকা সালফার উপাদান শরীর থেকে টক্সিন বের করে হজমশক্তি উন্নত করে। তাই হজমে সমস্যা থাকলে কাঁচা রসুন খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে নেয়াই ভালো।
ত্বকের যত্ন:
রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান ব্রণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। রক্তসঞ্চালন বাড়ায় এবং প্রদাহ কমায়। তাই ত্বকের যত্নের জন্য রসুন খেতে পারেন বিশেষ করে ব্রণের সমস্যা থাকলে।
একটানা ৩০ দিন রসুন খেলে শরীরে যেসব পরিবর্তন দেখা দেয়:
৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে কী হতে পারে
নিঃশ্বাসে রসুনের গন্ধ আরও তীব্র হতে পারে যেটা স্বাভাবিক।
কাঁচা রসুন খাওয়ার সময় পেটে হালকা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
শরীরে এনার্জি বৃদ্ধি অনুভব করতে পারেন বিশেষত যদি আপনার শরীরে কিছু পুষ্টির ঘাটতি থাকে।
২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সম্ভাব্য উপকার
যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বেশি, তাদের ক্ষেত্রে সামান্য এবং পরিমাপযোগ্য উন্নতি দেখা যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হতে পারে ফলে ঠান্ডা–কাশি বা মৌসুমি অসুস্থতা কম হতে পারে অথবা তীব্রতা কমে যেতে পারে।
কেউ কেউ হালকা হজমজনিত অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন এটা কমাতে রসুনের সঙ্গে দই, মধু বা অন্যান্য সুথিং খাবার খাওয়া উপকারী।
ত্বকে স্বচ্ছতা আসতে পারে বিশেষ করে ব্রণের পরিমাণ কমে গিয়ে ত্বক আরও পরিষ্কার দেখাতে পারে।
৩০ দিনের শেষে যে সিদ্ধান্ত নেবেন
যদি দেখেন উপকার পাচ্ছেন এবং শরীর ভালোভাবে সহ্য করছে, তবে আপনি এই অভ্যাস চালিয়ে যেতে পারেন।
আর যদি মনে হয় কোনো উপকার নেই বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি বিরক্ত করছে তাহলে এই অভ্যাস বন্ধ করাই ভালো।
যেভাবে ভাবে খাবেন:
রসুন চেঁছে বা কেটে ৫–১০ মিনিট রেখে দিন এতে অ্যালিসিন তৈরি হয়।
সালাদ, দই, চাটনি বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
নতুন হলে অর্ধেক কোয়া দিয়ে শুরু করুন।
কারা সাবধান হবেন: রসুন উপকারী হলেও সবার শরীর এক নয়। তাই সবাই রসুন খেতে পারবেন না। বিশেষ করে যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, সার্জারির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। এছাড়াও গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারীদেরও রসুন খাওয়ার আগে সতর্ক হতে হবে। তাই রসুন খাওয়ার কথা ভাবলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তার পরামর্শের বাইরে গিয়ে রসুনের উপকারিতা পেতে গিয়ে নয়তো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
প্রতিদিন একটি কাঁচা রসুনের কোয়া খাওয়া বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের জন্য নিরাপদ এবং এতে হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছারাও রসুন খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো হয়। তবে এটি সবার জন্য একেবারেই নয়। উপকারিতা থাকলেও রসুন সবার জন্য সমান কার্যকর নয়। যাদের বিশেষ শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের অবশ্যই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে শুরু করা উচিত।
সূত্র: এনডিটিভি










































