খুলনায় টার্গেট কিলিংয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা: শিক্ষক ইমদাদুল হত্যায় উত্তাল ফুলবাড়িগেট

128
Spread the love


স্টাফ রিপোর্টার
হত্যা, গোল-গুলি, বোমা হামলা ও কোপাকুপির শহরে পরিণত হয়েছে মহানগরী খুলনা। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামলেই কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ রবিবার রাতে বিএনপি কার্যালয়ে বোমা ও গুলিবর্ষণে এক প্রবীণ শিক্ষক ইমদাদুল হক নিহতহন। স্থানীয় যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনকি সম্পাদক ও মেম্বার মামুন শেখকে উদ্দেশ্যে ছোঁড়া লক্ষভ্রষ্ট হলে তিনি গুরুতর আহত হলেও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। এ সময় আরো দুই বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান বিল্লাল হোসেন আহত হন। এমন অবস্থায় আড়ংঘাটা, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ নিয়ে গত ১৪ মাসে শুধু মহানগরেই ৩৯ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আলোচিত হত্যা ঘটনায় টার্গেট হচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ করেছেন, একটিমহল পরিকল্পিভাবে শান্ত খুলনাকে অশান্ত করে তুলেছে। দলের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও নাগরিকদের নিরাপত্তার দাবি তুললেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এসব ঘটনায় জড়িত চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হয়নি।


খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নগরীর খানজাহান আলী থানায় প্রথম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে চলতি বছরের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত মেট্টোপলিটনের ৮টি থানায় ৩৯টি হত্যার ঘটনা ঘটে। নভেম্বরের হত্যা ঘটনাটি ঘটলো আড়ংঘাটা থানা এলাকায়। এসব ঘটনার মধ্যে ৩০ নং ওয়ার্ডে বিএনপি আমীর হোসেন বোয়িং মোল্লা, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে যুবদলের সহ-সভাপতি মানিক হাওলাদার, দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো: মাহবুবুর রহমান মোল্লা, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে যুবদল নেতা আল আমিন শেখ হত্যা ঘটনার এখনো কিনারা হয়নি।


২০২৫ সালের ১১ জুলাই (শুক্রবার) দুপুরে নগরীর মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়ায় নিজ বাড়ির সামনে খুন হন মোল্লা মাহবুবুর রহমান (৩৮)। যিনি দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। মোটরসাইকেলে আসা তিনজন দুর্বৃত্ত তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে দেয়।


২০২৪ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর টুটপাড়া তালতলা হাসপাতালের সামনে হামলার শিকার হন আমির হোসেন বোয়িং মোল্লা (৬৫)। তিনি ৩০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। ৪ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।


২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মানিক হাওলাদারকে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। কিন্তু এসব ঘটনার কোনটিরই কিনারা হয়নি।


এদিকে রবিবার সন্ত্রাসীদের ছোড়া বোমা ও গুলিতে মাদ্রাসা শিক্ষক মোঃ ইমদাদুল হক নিহত, বিএনপি নেতা শেখ মামুন, বিল্লাল খান ও শেখ মিজানুর রহমান গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সোমবার দুপুরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে। ফুলবাড়ী গেট বাস স্ট্যান্ড চত্বরে খান জাহান আলী থানা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খানজাহান আলী থানা বিএনপি’র সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান.। প্রধান অতিথি ছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল রহমান মনা।


বক্তব্য দেন চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাস, শেখ আব্দুস সালাম, শেখ আলমগীর হোসেন, ইকবাল হোসেন মিজান,এমদাদ হোসেন , শওকত হোসেন হিট্টু ,জাহাঙ্গীর হোসেন খোকা, রফিকুল ইসলাম রফিক, কাজী শহিদুল ইসলাম, ফকির রবিউল ইসলাম ,মিনা মুরাদ হোসেন, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, সিয়াম হোসেন, জিহাদুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।


খানজাহান আলী থানা বিএনপি মিজানুর রহমান বলেন, ওরা একজন নিরীহ শিক্ষককে হত্যা করলো। আমরা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য বার বার দাবি জানালেও প্রশাসন ব্যর্থ। একটি মহল এই অঞ্চলকে অশান্ত করে তুলছে। আমরা সকল হত্যা ঘটনার বিচার চাই।


নগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেছে বেছে বিএনপির ত্যাগী-পরিশ্রমী কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। অথচ কেউ ধরা পড়ছে না। আমরা শিক্ষক ইমদাদুল হক হত্যাসহ সকল ঘটনার বিচার চাই। অন্যত্থায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
অপরদিকে খুলনা টিচার ট্রেনিং কলেজ ময়দানে বাদ আছর নিহত শিক্ষক মো: ইমদাদুল হকের নামাজে জানাযা শেষে যশোরের মনিরামপুরে নিজ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানাজা নামাজে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন ও বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম হোসেন, খানজাহান আলী থানার সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আব্বাসসহ খানজাহান আলী থানার বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ শরীক ছিলেন।


তবে সোমবার বিকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা হয়নি। এছাড়া গুলি ও বোমায় আহত ইউপি সদস্য ও বিএনপি নেতা শেখ মামুন হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।


নিহত এমদাদুল হকের ছেলে অনিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার আব্বার কী অপরাধ ছিল, তাকে হত্যা করা হলো। আমার আব্বা ওয়াজ মাহফিলের টাকা আনতে গিয়ে হত্যার শিকার হলেন। তিনি আমার দুনিয়া। আমার জীবন শেষ হয়ে গেলো। এই রাষ্ট্রের কাছে কিছু চাইনা। আব্বা নাই, বিচার দিয়ে কী হবে?’


খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) তাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে এ ঘটনার তদন্ত করছে। প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত ও ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একাধিক টিম কাজ করছে। আমরা যাতে কোন নিরাপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হয় সেই দিকে সতর্কতার সাথে কাজ করা হচ্ছে। তবে একটু সময় লাগবে বলে তিনি জানান।


উল্লেখ্য, রবিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে অতর্কিতভাবে দুইটি মোটরসাইকেলযোগে চারজন দুর্বৃত্ত দলের কার্যালয়ে ঢুকে বিএনপি নেতা মামুন শেখকে লক্ষ্য করে পরপর দুটি বোমা নিক্ষেপ করে। আহতদের আত্মচিৎকার করলে তাদেরকে লক্ষ্য করে ৪/৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এতে মামুনের ভগ্নিপতি শিক্ষক ইমদাদুল হক, বিএনপি নেতা মামুন শেখ ও মিজানুর রহমান আহত হন। দলীয় নেতা-কর্মী ও স্বজনরা তাদের দ্রুত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক এমদাদুল হককে মৃত ঘোষণা করেন।


ওদিকে সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে ফুলবাড়িগেটে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় খুলনা-যশোর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দু:খ প্রকাশ: দৈনিক খুলনাঞ্চল পত্রিকায় শনিবার (০১ নভেম্বর) ‘নগরীতে ১৪ মাসে ৫৫ খুন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সংবাদে ৩৮টি হত্যার স্থলে ৫৫ জন বলে ছাপা হয়। তথ্যগত এ ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দু:খিত। – বার্তা সম্পাদক