মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ: সাতক্ষীরায় অবরোধ-মশাল মিছিল, মেহেরপুরে রণক্ষেত্র

12
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার:
মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় খুলনা অঞ্চলের সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরে সড়ক অবরোধ, মশাল ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ প্রধান মহাসড়কে স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, অধ্যাপক ডা. শহিদুল আলম দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে মানবিক সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্যকে প্রার্থী করায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

এ সময় তারা ডা. শহিদুল আলমকে পুনরায় মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে স্লোগান দেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় বক্তব্য দেন, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য শেখ নুরুজ্জামান ও ৬নং নলতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান, নলতা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কেসমতুল বারি,সাধারণ সম্পাদক মিলন কুমরা সরকার, কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক শেখ খায়রুল আলম, সাবেক ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও অনেকে।


মেহেরপুরে রণক্ষেত্র: মেহেরপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দ্বন্দ্বের জের ধরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে জেলার গাংনী উপজেলা শহর। এ সময় অন্তত ১০ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন ও জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রথমে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আমজাদ হোসেন ও জাভেদ মাসুদ মিল্টনের কার্যালয়ে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হন। জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুর-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন পক্ষের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। এরপর আমজাদ হোসেন তার কার্যালয়ে অবস্থান নিলে জাভেদ মাসুদ মিল্টনের নেতাকর্মীরা অফিসে হামালা চালিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। নেতাকর্মীরা আমজাদ হোসেনের অফিসের সামনে থাকা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে ভাঙচুর করে।

এ দিকে হামলার খবর পেয়ে হাসপাতাল বাজার থেকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে আমজাদ হোসেন পক্ষের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে বাসস্ট্যান্ডে আসেন। এসময় আমজাদ হোসেন পক্ষের উত্তেজিত নেতাকর্মীরা জাভেদ মাসুদ মিল্টনের অফিসের হামলা চালায়। অফিসের ভেতরে থাকা আসবাবপত্র এবং চেয়ার বের করে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন। তবে ঘটনার শুরুতে পুলিশের একটি পিকআপভ্যান এবং পরে সেনাবাহিনীর কয়েকটি টহল গাড়ি আসলে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরবর্তীতে আবারও হামলা-পাল্টা হামলা শুরু হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানি ইসরাইল। প্রসঙ্গত, সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিব মেহেরপুরের দুটি আসনে এমপি প্রার্থী ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই মেহেরপুর-২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য বিক্ষোভ মিছিল করেছিল জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সমর্থকরা।


অসন্তোষ, বঞ্চিতদের মশাল মিছিল: সাতক্ষীরা-২ আসনে বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রউফকে বিএনপি মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে ও ত্যাগী নেতা আব্দুল আলিমকে মনোনয়নের দাবিতে সাতক্ষীরায় মশাল মিছিল করেছে বিএনপির একাংশ। একইভাবে সাতক্ষীরা-৩ আসনে গরীবের বন্ধু নামে পরিচিত ডা. শহিদুল আলমকে বিএনপি মনোনয়ন না দিয়ে সাবেক সাংসদ কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে কালিগজ্ঞে বিএনপির একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম সমর্থন গোষ্ঠী সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের তালতলা এলাকায় সড়কে আগুন জালিয়ে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে সাতক্ষীরা-৩ (কালিগঞ্জ ও আশাশুনি) সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ড্যাব উপদেষ্টা ডা. শহিদুল আলমের সমর্থকেরা। সোমবার রাতে কালিগঞ্জের নলতার হাসপাতাল মোড় এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্লোগানে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয় নেতাকর্মীরা।

মিছিলটি সানি মার্কেটে গিয়ে শেষ হয়। পরে সানি মার্কেটের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য শেখ নুরুজ্জামান, উপজেলা বিএনপির সাবেক ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান পাড়, বিএনপি নেতা এস এম হাফিজুর রহমান বাবুসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা সাতক্ষীরা-৩ আসনের জন্য ঘোষিত কাজী আলাউদ্দীনের মনোনয়ন বাতিল করে ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা। এছাড়া বক্তারা ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দিলে আসনটি বিএনপি নিশ্চিতভাবে হারাবে বলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হুঁশিয়ার করেন।