নড়াইল প্রতিনিধি।।
নড়াইলের সদরে ত্রিভুজ পরকীয়ার জেরে মাসুম ফকির (৩৫) হত্যা মামলায় পরকীয়া প্রেমিকাসহ দুজনের যাবজ্জীবন সাজা ও তাদের আরেক সহযোগীকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ সময় প্রত্যেককে অর্থদণ্ডের আদেশও দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শারমিন নিগার এ রায় ঘোষণা করেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাড. এস এম আব্দুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন: লোহাগড়া উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের মোতালেব সরদারের মেয়ে আশা বেগম (২৯), আশার পরকীয়া প্রেমিক ও সদরের খলিশাখালী (নাকশী) এলাকার ওসমান শেখের ছেলে মো. আরাফাত শেখ (৩১) এবং আরাফাতের বন্ধু ও বুড়িখালী উত্তরপাড়ার এনায়েত ভূঁইয়ার ছেলে রোমান ভূঁইয়া (৩২)। রায় ঘোষণার সময় রোমান আদালতে উপস্থিত থাকলেও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৬ সালে নড়াইল সদরের নাকশী গ্রামে বিয়ে হয় লোহাগড়া উপজেলার আশা বেগমের। তার ভাশুরের ছেলে আরাফাতের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে আশার। আরাফাতের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক চলার পরও মোবাইল ফোনে আশা প্রতিবেশী মাসুম ফকিরের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। পরবর্তীতে স্বামীর সংসারে থেকেই আশা একই সঙ্গে দুটি পরকীয়া সম্পর্ক চালিয়ে যায়।
আরাফাত ত্রিভুজ পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আশার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। পরে আশা ও আরাফাত মাসুমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। আর আরাফাত প্রলোভন দেখিয়ে তার বন্ধু রোমানকেও তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে।
পরিকল্পনা মোতাবেক মাসুম হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে আশা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি চলে যান। ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় মাসুম। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ১৩ ডিসেম্বর নবগঙ্গা নদীর চর থেকে মাসুমের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের ছোট ভাই পরে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আদালতে আসামিরা জানান, দৈহিক মেলা মেশার কথা বলেই আশা মাসুমকে ঘটনার রাতে ডেকে নেন। পরে পরিকল্পনা মোতাবেক ডোলভিটায় নিয়ে মাসুমের গলায় লাইলনের রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ গুম করতে পরে মাসুমের মৃতদেহ নবগঙ্গা নদীর পানিতে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখেন।
সদর থানা পুলিশের কয়েক দফা তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরমীন আক্তার মাসুম হত্যায় চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় ২২ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিদের দোষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
নিহত মাসুমের পরকীয়া প্রেমিক আশা বেগম, আশার প্রেমিক আরাফাতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া আরাফাতের বন্ধু রোমানকে সাত বছরের কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। অপর অভিযুক্ত শাবানার দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
            
		









































