কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি।।
দুই দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হয়নি কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী ৩২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও টেকসইকরণ প্রকল্পের কাজ। দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। কাজ হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ। এরই মধ্যে নির্মাণাধীন বাঁধের কয়েক জায়গায় ধস নেমেছে। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়সারা কাজ ও পাউবোর অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসী।
প্রায় ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর। পরে আরও ছয় মাস সময় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন করা হয়। এই সময়েও কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, আরেক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পুনর্বাসন’ প্রকল্পের আওতায় কাজটি বাস্তবায়ন করছে পাউবোর খুলনা ও সাতক্ষীরা-২ বিভাগ। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা থেকে উপকূলীয় এলাকার জীবন ও সম্পদ রক্ষা, বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো, ঢাল সংরক্ষণ, নদী শাসন ও বনায়ন। কয়েকটি ভাগে কাজ করছে ২৫ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
বাঁধ-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্মাণকাজের জন্য চর বনায়নের গাছ কেটে সেখান থেকে মাটি নিয়ে বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো হয়েছে। বছর ঘুরতেই সেসব চরের মাটি সরে গিয়ে ধসে পড়ছে বাঁধ। তাছাড়া নদীতীর রক্ষায় বালুর বস্তা ‘ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ে’র জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের পাশ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হয়। ফলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা।
শনিবার উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাপুনিয়া থেকে হরিহরপুর হয়ে দক্ষিণ বেদকাশির গোলখালি পর্যন্ত ৯-১০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। এই এলাকার বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বৃদ্ধির কাজ বেশির ভাগ জায়গায়ই সমাপ্ত হয়েছে। বালুর বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের কাজ চলছে। তবে অনেক জায়গায় বালুর বস্তা দীর্ঘদিন চরের কাদামাটিতে বিক্ষিপ্তভাবে ফেলে রাখায় তা নষ্ট হতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় বালুর বস্তা ডাম্পিং শেষ হলেও অন্য কাজের দৃশ্যমান উন্নতি চোখে পড়েনি। বরং এসব এলাকা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
গাপুনিয়ার বাসিন্দা হরষিত মণ্ডল উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তিনি বলেন, পাউবোর ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের গাতিরঘেরি এলাকায় বাঁধে মাটির কাজ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। সম্প্রতি ওই জায়গার বাঁধের কয়েক জায়গা ধসে গেছে। ফলে আবারও ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই গ্রামের চন্দন কয়ালের বাড়ি থেকে বীনাপানি স্লুইসগেট পর্যন্ত বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু পাশের চর বনায়নের গাছ কেটে মাটি তুলে নেওয়ায় প্রায় ৩০০ মিটার অংশে ধস নেমেছে। সেখানে বালুর বস্তা ডাম্পিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা গ্রামবাসী জানেনই না।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের গোলখালি গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম অভিযোগ করেন, গ্রামের সরকারি পুকুর-সংলগ্ন এলাকার নির্মাণাধীন বাঁধ কয়েক দিন হলো ধসে গেছে। ওই অংশ বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন ঠিকাদারের লোকজন। এ ছাড়া ইউনিয়নের হারেজখালি এলাকায়ও বাঁধে ধস নেমেছে। বালুর স্তূপ দিয়ে ওই জায়গাও ঢেকে দিচ্ছেন ঠিকাদারের লোকজন।
বক্তব্য জানতে কাজের সাইটে স্থাপিত সাইনবোর্ডে লেখা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চার-পাঁচটি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও কেউ ধরেননি। পরে শ্রমিকদের বক্তব্য জানতে গেলে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
প্রকল্পের অধিকাংশ ঠিকাদার বিগত সরকারের সময় রাজনৈতিক সুপারিশে কাজ পেয়েছিলেন। এ তথ্য জানিয়ে কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দীন বলেন, ৫ আগস্টের পর তাদের কাজের এলাকায় খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কর্মচারীরাই এসব দেখাশোনা করছেন। তাছাড়া বেশির ভাগ কাজ সাব-কন্ট্রাক্টে দেওয়া হয়েছে। ফলে কাজ হয়েছে দায়সারা গোছের।
পাউবো খুলনা-২ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, যেসব স্থানে নির্মাণ সম্পন্ন বাঁধ ধসে গেছে, তা পুনরায় সংস্কারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজের ধীরগতির বিষয়ে তিনি প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল বাশারের নম্বরে একাধিবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।











































