শান্তিতে নোবেল পেলেন মাচাদো

58
Spread the love


অনলাইন ডেস্ক।।
ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছেন। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে নোবেল দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। পুরস্কার ঘোষণার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দাবি সত্ত্বেও নোবেল কমিটি তাদের স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখলো। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এতে বলা হয়, ৫৮ বছর বয়সী ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার মাচাদো পশ্চিমাঘেঁষা একজন রাজনীতিবিদ। বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। ভেনেজুয়েলার আদালত তাকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রাখে। ফলে তিনি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি। মাদুরো ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং তার ১২ বছরের শাসনকাল গভীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে জর্জরিত। নোবেল কমিটি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, যখন স্বৈরাচারীরা ক্ষমতা দখল করে, তখন স্বাধীনতার যে সাহসী রক্ষকরা উঠে দাঁড়ান এবং প্রতিরোধ করেন তাদের স্বীকৃতি দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাদুরো সরকারের দমনপীড়ন সত্ত্বেও মাচাদোর লড়াই: নির্বাচনে লড়তে বাধা পাওয়ার পর মাচাদো তার বিকল্প প্রার্থী, সাবেক রাষ্ট্রদূত এডমুন্ডো গনজালেসের জন্য প্রচারে নামেন। তার জনসভায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তবে এই সময়ে মাচাদোর নিরাপত্তা প্রধানসহ তার ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া তার দলের ছয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় তারা আর্জেন্টিনার দূতাবাসে আশ্রয় নেন। পুরস্কার ঘোষণার পর এক ফোনকলে নোবেল কমিটির সচিব ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেনকে মাচাদো আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন- ওহ মাই গড, আমার কোনো কথা নেই। আমি এর যোগ্য নই। তিনি ভেনেজুয়েলার প্রথম এবং লাতিন আমেরিকার ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে এই পুরস্কার পেলেন।

হোয়াইট হাউসের কটাক্ষ, আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা: এদিকে পুরস্কার ঘোষণার পর হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চুং এক্স বার্তার এক পোস্টে লিখেছেন, নোবেল কমিটি প্রমাণ করলো যে, তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করা, যুদ্ধ শেষ করা এবং জীবন বাঁচানোর কাজ চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে মাচাদোর নোবেল প্রাপ্তিকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন মাচাদোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ওএইচসিএইচআর-এর মুখপাত্র বলেছেন, এই স্বীকৃতি ভেনেজুয়েলার জনগণের ‘মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার এবং আইনের শাসনের’ স্পষ্ট আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। ইইউ প্রধান বলেন, এই পুরস্কার মাচাদোর সাহস এবং দৃঢ় প্রত্যয়কে সম্মানিত করে, যা নীরব থাকতে অস্বীকার করা প্রতিটি কণ্ঠস্বরকে শ্রদ্ধা জানায়। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াদেপুল এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলাও মাচাদোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মেটসোলা তার এক্স পোস্টে লেখেন, ভেনেজুয়েলায় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য মাচাদোর নিরলস সংগ্রাম বিশ্ব জুড়ে লাখ লাখ মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে এবং তাদের অনুপ্রাণিত করেছে।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মাচাদোর উপস্থিতি অনিশ্চিত: আগামী ১০ই ডিসেম্বর অসলোতে সুইডিশ শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে এই পুরস্কার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হবে। পুরস্কারের অর্থমূল্য হলো ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোন, যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন ডলার। তবে আত্মগোপনে থাকা মাচাদো এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদি তিনি উপস্থিত হতে না পারেন, তবে তিনি সোভিয়েত ভিন্নমতাবলম্বী আন্দ্রে শাখারভ এবং মিয়ানমারের অং সান সুচির মতো শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের তালিকায় যুক্ত হবেন, যারা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।