খুলনাঞ্চল রিপোর্ট।।
গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের পুঁজি ছিল মাত্র ১৭৮ রান। ইংল্যান্ডের মতো পরাশক্তির বিপক্ষে এই রান ডিফেড করা যে কোনো দলের জন্য কঠিন। এরপর অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ যারা কিনা মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলছে তাদের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং। তবে এসব পরিসংখ্যান পাশে রেখে বাংলাদেশের বোলাররা সেদিন ইংল্যান্ডকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশের না জেতার পেছনে কলকাঠি নাড়ার অন্যতম হোতা এই ম্যাচের তৃতীয় আম্পায়ার গায়ত্রী ভেনুগোপালান। ইংল্যান্ডের শীর্ষ ব্যাটার হেদার নাইটকেই তিনি নিশ্চিত আউট থেকে নট আউট দিয়েছেন অন্তত ২ বার। ম্যাচ শেষে নিজের আউট স্বীকারও করেন নাইট! গায়ত্রী এবারই প্রথম এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিলেন না, তার ক্যারিয়ারটাই এমন বিতর্কে ভরা।
প্রথমে আসা যাক বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে তার বিতর্কিত দুই সিদ্ধান্ত নিয়ে। প্রথম দফায় হেদার নাইটকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন মারুফা আক্তার। অনফিল্ড আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন নাইট। তখনও তার ব্যক্তিগত রান দুই অঙ্কে পৌঁছায়নি। রিপ্লেতে দেখা যায় ব্যাট পাস করার সময় আল্ট্রাএজে স্পাইক, তবে বল আর ব্যাটের মধ্যে দূরত্ব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেক সময় বাতাসেও স্পাইক তৈরি হয়। গায়ত্রী নিজেও বললেন, তার কাছে ‘কনক্লুসিভ এভিডেন্স’ মনে হয় নাই। অর্থাৎ তিনি নিশ্চিত নন যে বল ব্যাট নাকি প্যাডে লেগেছে। আইসিসি’র নিয়ম অনুযায়ী তখন তাকে অনফিল্ড আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটা রেখে দিতে হতো। কিন্তু এই গায়ত্রী নিয়মের তোয়াক্কা না করে নাইটকে নট আউট দেন। দ্বিতীয়টায় তো পরিস্থিতি আরও বিশ্রী, এবার লেগ স্পিনার ফাহিমার বলে কাভারে ক্যাচ দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন নাইট। এবারও ওই ‘কনক্লুসিভ এভিডেন্সের’ অভাব! স্বর্ণার ক্যাচটা যথেষ্ট ক্লিন মনে হয় নাই থার্ড আম্পায়ারের! স্বর্ণার হাতে তুলে দেওয়া নাইটের পরিষ্কার ক্যাচ অন্তত ২ মিনিট ধরে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে দেখতে হয়েছে ‘কনক্লুসিভ এভিডেন্স’ পেতে। নাইট ততক্ষণে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে। নতুন ব্যাটারও ঢুকে গেছেন মাঠে! এমন সময়ে গায়ত্রী ফিরিয়ে আনেন নাইটকে। এমন ম্যাচের পর ফাহিমা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘সে (নাইট) আউট ছিল। অথচ আম্পায়ার তাকে আউট দেননি। ওই উইকেটটি পেলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হতে পারতো।’ স্বয়ং নাইটও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন যে, তিনি নিজেকে আউটই মনে করেছিলেন। নাইট বলেন, ‘এক ইনিংসে তিনবার আউট হয়ে (আগের দুইবার ছিল রিভিউয়ে পাল্টে যাওয়া এলবিডব্লিউ) আবার বেঁচে যাওয়া- এটা আমার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। আমি ভেবেছিলাম বলটা ঠিকভাবে হাতে গেছে আর সেটা বৈধ ক্যাচ ছিল, তাই আমি হাঁটতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার ভিন্ন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।’
এর আগে নারী আইপিএলে এক ম্যাচেই তিনটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়ার গায়ত্রী। মুম্বাই-দিল্লির সেই ম্যাচে ১৮তম ওভারে সিঙ্গেল নিতে গেলেন শিখা পান্ডে আর রাধা যাদব। রিপ্লেতে দেখা যায়, শিখা রান নিতে গিয়ে ব্যাট ক্রিজে প্লেস করতে পারেননি। দাগের ওপর রেখেছিলেন, যখন এলইডি লাইট প্রথমবার জ্বলে উঠেছিল। কিন্তু, সবাইকে অবাক করে দিয়ে গায়ত্রী ভেনুগোপালান থার্ড আম্পায়ারের চেয়ার থেকে বললেন, ‘নট আউট’। অথচ নিয়ম অনুযায়ী জিংগেল বেল জ্বললেই আউট দেওয়ার কথা। দুই বল পরে রাধা যাদবকেও ‘নট আউট’ বললেন তিনি। অথচ, রাধা ডাইভ দেওয়ার পরে ব্যাটের কোনো অংশই ক্রিজে রাখতে পারেননি। এরপর দিল্লির যখন দরকার ২ বলে ২ রান, অরুন্ধতী রেড্ডি ফুল স্ট্রেচ ডাইভ দিয়ে এবারও ব্যাট ক্রিজের ভেতরে আনতে পারেননি, তার আগেই ইয়াস্তিকা ভাটিয়া স্টাম্পের লাইট জ্বালিয়ে ফেলেন। অথচ, গায়ত্রী বললেন, ‘ব্যাটার ক্রিজে পৌঁছে গেছেন। তাই, নট আউট।’ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকও এই ম্যাচে গায়ত্রীকে তৃতীয় আম্পায়ার হিসেবে দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘আরে এ তো ঘরোয়া ক্রিকেটেই প্রায় ভুল সিদ্ধান্ত দেয়। গত নারী আইপিএলে এক ম্যাচেই কত কাণ্ড করলো। একে কিভাবে বিশ্বকাপের ম্যাচে দায়িত্ব দেওয়া হলো কে জানে।’
বাংলাদেশ অধিনায়ক জ্যোতি ম্যাচের পর কিছু না বললেও ম্যাচ চলাকালীন আক্ষেপ করে বলেন, ‘এভাবে চললে ভালো খেলে আর কী লাভ!’ ২০১৯ সাল থেকে পুরোদস্তর আম্পায়ারিং করছেন গায়ত্রী। ২০২৩ সালে প্রথমবার আন্তর্জাতিক নারী ওয়ানডেতে আম্পায়ারিং করেন তিনি। এছাড়া চলতি বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও ছিলেন তামিলনাড়ুর এই আম্পায়ার।










































