পবিত্র আশুরা আজ, সত্যের পক্ষে দাঁড়াতেই হবে

7
Spread the love


পবিত্র আশুরা আমাদের সত্যের প্রতি অবিচলিত অঙ্গীকার নিয়ে, সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামকে তুলে ধরার যে শিক্ষা দেয়, সেই শিক্ষা গ্রহণের মধ্যে এ দিবস পালনের সার্থকতা নিহিত। আজ ১০ মহররম। পবিত্র আশুরা। মানব ইতিহাসে ১০ মহররম নানা কারণে স্মরণীয়। তবে এ দিবস পালনের কেন্দ্রে উঠে এসেছে চৌদ্দশ’ বছর আগে ঘটে যাওয়া কারবালার বিয়োগান্ত ও মর্মন্তুদ ইতিহাস। সেই সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান ভূরাজনীতির অনেক মিল আছে। সুতরাং আশুরার দিবসে কারবালায় ইমাম হোসেন রা:-এর সপরিবারে শাহাদতের তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা এতটুকু ম্লান হয়নি। সত্যের স্বার্থে শিশুপুত্র ও সহচরসমেত জীবন বিলিয়ে দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের নজির রেখে গেছেন তিনি। তবু অত্যাচারী শাসকের আনুগত্য মেনে নেননি, তার অন্যায় চাওয়ার কাছে নতি স্বীকার করেননি। বেইনসাফি ও অসত্যের বিরুদ্ধে প্রাণপণ সংগ্রামের এ আদর্শ অনুসরণ রাসূল সা:-এর উম্মতের জন্য শিক্ষা। এটি আশুরার মর্মবাণী। পবিত্র আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। ইসলামের বর্ণনা মতে, আশুরার এ দিনে আল্লাহ প্রথম মানব আদম আ:-এর তওবা কবুল করেন। মহাপ্লাবন থেকে নুহ আ:-এর মুক্তি, সদলবলে অত্যাচারী ফেরাউনের সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া এবং এভাবে মুসা আ: ও তার অনুসারীদের মুক্তিলাভ, মাছের পেট থেকে ইউনূস আ:-এর পরিত্রাণ, নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ইবরাহিম আ:-এর পরিত্রাণ, কূপের অন্ধকার গহ্বর থেকে ইউসুফ আ:-কে উদ্ধার, ইয়াকুব আ:-এর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া, দাউদ আ:-এর তওবা কবুল হওয়া, ঈসা আ:-এর জন্ম এবং আকাশে উত্থান, আল্লাহর কাছ থেকে রাসূল সা:-এর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমাপ্রাপ্তির মতো বিশেষ তাৎপর্যময় ঘটনাগুলো এ দিনে ঘটে। এ দিনে আইয়ুব আ:-এর দীর্ঘকালীন ও জটিল রোগমুক্তি এবং সুলাইমান আ:-কে রাজত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়। আশুরার দিনটি বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহান আল্লাহতে সমর্পিত থেকে ইবাদত-বন্দেগি করেন। তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একটি অংশ শোকের দিন হিসেবে দিনটি পালন করেন। সেই সাথে তাজিয়া মিছিলসহ নানা আচার অনুষ্ঠানে কারবালার ঘটনা স্মরণ করেন। প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ও কবি মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর বলেছেন, ‘কতলে হোসাইন আসল মেঁ মর্গে ইয়াজিদ হ্যায়/ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ।’ (হোসেন রা:-এর হত্যাকাণ্ড আসলে ইয়াজিদের মৃত্যু, প্রতিটি কারবালার ঘটনার পরে ইসলাম আরো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে)। অর্থাৎ হজরত হোসেন রা:-এর শাহাদতের মধ্য দিয়ে মূলত অত্যাচারী-স্বেচ্ছাচারী ইয়াজিদের পরাজয় ঘটেছে। বাস্তবেও কারবালায় রাসূল সা:-এর বংশধর ইমাম হোসেন ও তার পরিবারের অপরিমেয় ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকারের সকরুণ ইতিহাস স্মরণ করে মুসলিম উম্মাহ আদর্শিক নবজীবন লাভ করে। সত্য ও ন্যায়ের অবিনশ্বর চেতনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। আজ পুরো বিশ্বের মুসলমান দিশেহারা। অনৈক্য ও নীতি-নৈতিকতার দুর্বলতায় তারা সর্বত্র পদে পদে লাঞ্ছিত-অপমানিত হচ্ছেন। কোথাওবা পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যাচ্ছে। তারপরও তাদের হুঁশ ফিরছে না। পবিত্র আশুরা আমাদের সত্যের প্রতি অবিচলিত অঙ্গীকার নিয়ে, সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামকে তুলে ধরার যে শিক্ষা দেয়, সেই শিক্ষা গ্রহণের মধ্যে এ দিবস পালনের সার্থকতা নিহিত। আমাদের সে শিক্ষাই নিতে হবে। কারণ, বর্তমান লাঞ্ছনাকর জীবন থেকে মুসলিম উম্মাহর বেরিয়ে আসা ছাড়া উপায় নেই।