ফের করোনার চোখ রাঙানি

4
Spread the love


স্টাফ রিপোর্টার
দেশে ফের বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। চলতি মাসেই অর্ধশতাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছেন করোনায়। মারাও গেছেন একজন। আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। মাস্ক পরা এবং টিকা নেয়ার তাগিদ দেন তারা। ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এসব দেশে ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দেয়া হয় তাতে। দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট, তৎকালীন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির (কোভিড) অন্যতম সদস্য, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ)-এর সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, সংক্রমণ বাড়ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়। নতুন একটি ধরনের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ভয়ের কিছু নেই। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, জনসমাগমে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। যাদের টিকা নেয়া হয়নি তাদেরকে দ্রুত টিকা নেয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এদিকে, স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে করোনাবিষয়ক কলের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়েছে। এ নম্বরে ফোন করে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শ পাওয়া যায়। গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও করোনা বৃদ্ধির কথা বলছে। এ পরিস্থিতিতে করোনার সম্ভাব্য বিস্তার বন্ধে এর পরীক্ষার সরঞ্জাম সংখ্যা বাড়ানো এবং আবার টিকা দেয়া শুরুর কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, যারা বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা, ভিন্ন কোনো জটিল রোগে ভুগছেন তাদের জন্য তো বটেই, এমনকি যেসব ব্যক্তির সর্বশেষ টিকা নেয়ার মেয়াদ ছয় মাস পার হয়ে গেছে, তাদেরও করোনার টিকা নেয়া উচিত। অন্যদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের শরীরে নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এই সময়ে করোনাভাইরাসে কারও মৃত্যু হয়নি। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১৩ জন। এ নিয়ে দেশে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জনে। আর এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ হাজার ৫০০ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ছিল ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মোট করোনা পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৮ জনে। চলতি মাসে ৫৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন একজন। ২০২২ সাল থেকে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসতে থাকে। গত বছরের (২০২৪) মাঝামাঝি থেকে এ বছরের ৩রা জুন পর্যন্ত করোনায় কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি’) তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন একজন। কিন্তু মে মাসের শেষ সপ্তাহে এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫-এ। আইসিডিডিআর,বি’র গবেষকেরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথা বলছেন। এর নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটিও পাওয়া গেছে। দুটোই করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভ্যারিয়েন্টের উপধরন। বাংলাদেশে নতুন ধরনের পাশাপাশি ভারতেও এনবি.১.৮.১ নামে একটি নতুন ধরনের বিস্তার দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত ২৩শে মে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এনবি.১.৮.১ ধরন এখন ক্রমেই ছড়াচ্ছে। এর সংক্রমণের হারও বেশি। তবে করোনার আগের ধরনগুলোর চেয়ে এই ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি নয়। করোনার সংক্রমণ রোধে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা কিটের মজুতের কথা বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সূত্র জানায়, তাদের হাতে এখন ৩১ লাখ ফাইজারের তৈরি করোনার টিকা আছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ ফাইজারের টিকা সব জেলায় পাঠানো হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৬ই আগস্ট। এখন হাতে আছে আসলে ১৪ লাখ টিকা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, শুধু ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী নয়, আসলে যাদের করোনার টিকা নেয়ার মেয়াদ ছয় মাস পার হয়ে গেছে, তাদেরও টিকা নিতে হবে। আর সেই উদ্যোগ যদি নিতে হয় তবে এখন যে টিকা আছে, তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। সরকার ইচ্ছা করলে এ নিয়ে ডব্লিউএইচও বা অন্য দাতাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। ভ্রমণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা জারি: ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এসব দেশে ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এ সতর্কবার্তা জারি করে। এতে বলা হয়, অমিক্রনের নতুন সাব- ভেরিয়েন্ট এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন-১ ও এনবি ১.৮.১ এর সংক্রমণ বিভিন্ন দেশে বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি জোরদার করতে হবে। নির্দেশনায় আরও উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল হ্যান্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক, গ্লাভস ও পিপিই মজুত রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রচার করতে হবে এবং জনগণকে ভারতসহ সংক্রমণপ্রবণ দেশগুলোতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি’র গবেষকেরা জানান, করোনার আরও দুটি নতুন ধরন এক্সএফজি ও এক্সএফসি শনাক্ত হয়েছে- যেগুলো অমিক্রন জেএন-১ এর উপধরন এবং সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি। এ পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দিনে সাতবার বা প্রয়োজন মতো অন্তত ২৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নাক-মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সন্দেহজনক রোগীদের বিষয়ে বলা হয়েছে, কেউ অসুস্থ হলে তিনি যেন ঘরে থাকেন এবং প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। রোগীকে অবশ্যই মাস্ক পরতে বলা হয়েছে এবং জটিল পরিস্থিতিতে আইইডিসিআরের হটলাইনে (০১৪০১-১৯৬২৯৩) যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ ও সর্বসাধারণের সতর্কতা বজায় রাখার মাধ্যমেই এই নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলেও উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।