খুলনাঞ্চল রিপোর্ট
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে নগদ টাকা উত্তোলনের প্রধান ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এটিএম বুথ, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং। তবে বাস্তবতা হলো—ঈদের মৌসুমে অধিকাংশ এটিএম বুথেই পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় শহর থেকে শুরু করে গ্রামের সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু এটিএম বুথ বন্ধ কিংবা টাকা সংকটে অচল অবস্থায় রয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, আদাবর, মগবাজার, ধানমন্ডি, উত্তরা-এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বুথে টাকা নেই। আবার কোথাও কারিগরি ত্রুটির কারণে লেনদেন বন্ধ।
মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত এক বেসরকারি ব্যাংকের বুথে গিয়ে দেখা যায়, বুথের দরজায় একটি নোটিশ ঝোলানো—‘টাকা নেই, দুঃখিত!’ রাজশাহীতেও একই চিত্র।
অন্যদিকে, সাউথইস্ট ব্যাংকের এক বুথে গিয়ে দেখা যায়, অন্য ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারছেন না। সীমিতসংখ্যক বুথে টাকা থাকলেও, সেখানে আবার ৫ হাজার টাকার বেশি উত্তোলন সম্ভব নয়।
প্রয়োজনীয় মুহূর্তে টাকা না পাওয়া মানে মানসিক চাপ
মধুবাগের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক। গতকাল দুপুর থেকে তিনি চারটি বুথে গিয়ে চেষ্টা করেও এক টাকাও তুলতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় বাজার-সদাই, কোরবানির গরুর বেতন—সব জায়গাতেই নগদ টাকার দরকার হয়। পাঁচটি বুথ ঘুরেও টাকা তুলতে পারিনি। এটা ভীষণ হতাশাজনক।’
গ্রামাঞ্চলেও একই চিত্র
শুধু শহরেই নয়, জেলা শহর এমনকি গ্রামাঞ্চলেও একই অবস্থা। কুমিল্লা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ অনেক জেলায় ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথে গিয়ে গ্রাহকেরা খালি হাতে ফিরছেন। কিছু বুথে সকালবেলা টাকা রাখা হলেও দুপুর বা বিকেলের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় একমাত্র বুথটিতে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সেটি দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিকাশ বা নগদের ওপর নির্ভর হতে বাধ্য হচ্ছেন। তাও আবার চার্জ বেশি হওয়ায় অনেকে বিরক্ত।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য
একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, একটি এটিএম বুথে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাখা যায়। ঈদের সময় টাকার চাহিদা বেশি হওয়ায় সেই টাকা দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
নিকটবর্তী শাখা থেকে টাকা সরবরাহ করা গেলেও দূরবর্তী বুথগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ, এসব বুথ তৃতীয় পক্ষ (থার্ড পার্টি ভেন্ডর) দ্বারা পরিচালিত হয়। ছুটির সময় তারা অনেক সময় সঠিক সময়ে টাকা রিফিল করতে পারে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১২ হাজার ৯৪৬টি এটিএম বুথ এবং ৭ হাজার ১২টি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে। ঈদ বা অন্যান্য উৎসবের সময়ে এসব বুথে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত টাকা রিফিল না হলে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ে।
ব্যাংকগুলো দুই পদ্ধতিতে বুথে টাকা সরবরাহ করে
১. শাখার আওতাধীন বুথে শাখা থেকেই সরাসরি টাকা সরবরাহ। ২. দূরবর্তী বুথে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ ও রিফিল করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ব্যাংকগুলোকে ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বুথে স্বয়ংক্রিয় রিফিল সিস্টেম এবং পর্যাপ্ত তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বুথে প্রযুক্তিগত সমস্যা দ্রুত সমাধান ও বিকল্প বুথের নির্দেশনা গ্রাহকদের জানানো উচিত।
একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকগুলোকে যৌথভাবে একটি ফোর্সড মনিটরিং সেল গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা, যাতে ছুটির সময়ও জরুরি ভিত্তিতে নগদ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়।