স্টাফ রিপোর্টার।।
১৩ বছরেও চালু করা যায়নি খুলনার নতুন কারাগার। ২০২৪ সালের জুনে সব কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারাগারের সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুলাই মাসে কারা অধিদফতরকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ১৯১২ সালে নগরের ভৈরব নদের তীরে নির্মাণ করা হয় ৬০৮ বন্দি ধারণক্ষমতার খুলনা জেলা কারাগার। বর্তমানে এখানে বন্দি রয়েছেন প্রায় ১৫শ। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ২০০৮ সালের ২০ জুলাই খুলনায় আধুনিক কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১১ সালে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে ১৪৪ কোটি টাকা ধরা হলেও কয়েক দফা বেড়ে এটি সর্বশেষ দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়। সময় ও ব্যয় বাড়লেও কাজ শেষ না হওয়ায় রয়েছে অসন্তোষ। গত বছরের জুনে সব কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুলনার সিটি বাইপাস সড়কের প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে এটি একনেকে অনুমোদন পেলেও কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ। কাজ শেষের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জুন।
কিন্তু জমি অধিগ্রহণ, কারা অভ্যন্তরে নির্মাণাধীন চারতলা হাসপাতাল পাঁচতলাকরণ, কারারক্ষীদের বাসভবন সম্প্রসারণ, দর্শনার্থীদের স্থান ও ভবনের বর্ধিতকরণসহ বেশ কিছু নতুন প্রস্তাবনা প্রকল্পে সংযুক্ত হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। তাই কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ওই বছরের জুলাই মাসে হস্তান্তরের সময় দেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে চলে গেছে প্রায় এক বছর। কিন্তু এখনও হস্তান্তর করা হয়নি। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বসানোসহ সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে বর্জ্য সরানোর কাজ। গণপূর্ত বিভাগ হস্তান্তর করার জন্য প্রস্তুত আছে। আগামী জুলাইয়ে কারাগারটি বুঝে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কারা অধিদফতর। এরপরই চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছে। শুরুতে যে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল, পরে সেটি অনেক পরিবর্তন হয়। এসব পরিবর্তন প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত করে পাস করিয়ে আনতে অনেক সময় লেগেছে। তাই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। সার্বিক কাজ সম্পন্ন করতে ২৮৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজে ব্যয় হয়েছে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
প্রকল্প অনুযায়ী, এখানে চার হাজার বন্দি রাখা যাবে। তবে প্রকল্পের আওতায় আপাতত দুই হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া কারাগারের ভেতরে বিভিন্ন শ্রেণির বন্দি ব্যারাক, কারারক্ষী কোয়ার্টারসহ একতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত ৪৭টি ভবন ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ারসহ কংক্রিটের অবকাঠামো রয়েছে ৫২টি। কারাগারের ভেতরে ১৮ ফুট, ১২ ফুট, ৪ ফুটসহ বিভিন্ন উচ্চতার প্রাচীর নির্মাণ হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। কিশোর-কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে।
একইভাবে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকছে। আরও আছে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকছে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এই ওয়ার্ডে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদনকেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কারাগারের সামগ্রিক নির্মাণকাজ শেষ। হস্তান্তর করার জন্য আমরা প্রস্তুত। কারা অধিদফতরের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে পরিদর্শন করার পর এটি বুঝে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাবেন। তারা যখন চাইবেন, আমরা তখনই তাদের বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি।’
কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত উল ফরহাদ বলেন, ‘গত বছরের জুলাই মাসে খুলনার আধুনিক কারাগার হস্তান্তর করার সময় ছিল। কিন্তু হস্তান্তর করা হয়নি। আগামী জুলাই মাসে আমরা এটি হস্তান্তর করার জন্য বলেছি। সময় আর বাড়ানোর কোনও সুযোগ নেই। জুলাই মাসে বুঝে নেওয়ার পরই এটি চালু করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরের কারাগারটি অনেক পুরোনো। প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল সার্ভে ও সমীক্ষার পর যশোরে আধুনিক কারাগার নির্মাণের প্রকল্প একনেকে পাঠানো হবে। আর কুষ্টিয়া কারাগারটি এখনও উপযোগী আছে। যশোরের প্রকল্পের পরই কুষ্টিয়া কারাগার নিয়ে ভাববো আমরা।’