বাপি সাহা
১৯৮৮ সালটি বাংলাদেশের জন্য অনেক স্মরণীয়। বাংলাদেশের মানুষ ১৯৮৮ সালে দেখেছে ভয়াবহ বন্যা। সেই সময় ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যে ভূমিকা রেখেছিল সেটি কিন্তু আজও ভোলেনি আমাদের দেশ।
ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি বড় বার্তা নিয়ে আসে জাতিসংঘ। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ প্রথম ডাক পায় জাতিসংঘ মিশনে। ইরান ইরাক যুদ্ধে সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই থেকে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের জাতিসংঘের মিশন কার্যক্রম যাত্রায়। দক্ষতা, মেধাও পরিশ্রমের বলে পিছনে তাকাতে হয়নি আমাদেও শান্তিরক্ষীদের।
মেধা ও পরিশ্রমের সংমিশ্রনে সেই থেকে পথ এগিয়ে চলা। গৌরবের ৩৫ বছর পার করতে চলেছে বাংলাদেশের মিশন কার্যক্রম। বিশ^াস ও আস্থার প্রতীক হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে। জাতিসংঘের মিশনের অন্যতম সঙ্গী হয়ে উঠেছে আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনী,পুলিশ ও বেসামরিক সদস্যরা। দেশমাতৃকার জন্য শেষ রক্তবিন্দু দেবার জন্য আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনী ,পুলিশ ও বেসামরিক সদস্যরা সকল সময় প্রস্তুত। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে পৃথিবীর ১০ দেশের শান্তির পতাকা হাতে নিয়োজিত আছেন ৪৪৪ জন নারীসহ ৫ হাজার ৮১৮ জন শান্তিরক্ষী। দীর্ঘ চার দশকের শান্তিাক্ষার ইতিহাসে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশে^র ৪৩ টি দেশ ও স্থানে ৬৩ টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে।
এই যাত্রা কিন্তু মোটেও সুখকর ছিল না। আমাদের প্রাপ্তি যেমন সুখের ঠিক তেমনিভাবে আমরা হারিয়েছি জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের বিগত ৩৫ বছরে জীবন দিয়েছেন ১৬৮ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন অন্তত ২৫৭ জন। এই দীর্ঘযাত্রায় সশস্ত্র বাহিনীর অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন দায়িত্ব পালন করেছেন। (তথ্য সূত্র আমর্ড ফোর্সেস ডিভিশনের ওয়েব সাইট)
যে সকল এলাকায় এই দায়িত্ব বর্তমানে পালন করতে হচ্ছে সেই দেশগুলি হচ্ছে সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চল আবেই মধ্য আফ্রিকার প্রজাতন্ত্র (সিএআর),সাইপ্রাস, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) লেবানন,দক্ষিণ সুদান,উত্তর -পশ্চিম আফ্রিকার বিরোধপূর্ণ অঞ্চল,পশ্চিম সাহারা,ইয়েমেন,লিবিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর-এ কাজ করে যাচ্ছে আমাদের শান্তিরক্ষীরা।
জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে অনেকগুলো কাজের সাথে জড়িত থাকতে হয়। মানবিক সহযোগিতার কাজটি করতে হয় অত্যন্ত গভীরতার সাথে। চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হয় যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলিতে। আভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধে বিরোধ মেটানোর কাজে নিয়মিত কাজ করতে হচ্ছে আমাদের শান্তিরক্ষীর্দে। স্থলভাগে মাইন অপসারণের কাজ করতে হয় যা অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপদজনক। যে কোন সময় ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারে। হতে পারে প্রাণহানি। শিশুদের শিক্ষা জন্য বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে এই মিশনের মাধ্যমে। মানুষের জীবন রক্ষার কাজটি করতে হয় অনেক সময় নিজের জীবনের বিনিময়ে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শরণার্থী ও ঘরবাড়ি হীন মানুষের পাশে সহযোগিতা প্রদান, অস্ত্রবিরতির সময় দুই পক্ষ সঠিকভাবে সেটি মানছেন কিনা সেটি পর্যবেক্ষন করা, অস্ত্র জমা নেওয়া। যারা ভিন্ন মতকে অনুসরণ করে বিদ্রোহী গ্রুপের দায়িত্ব পালন করছিলেন তারা যখন ফিরে আসে তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকে আমাদের জাতিসংঘে নিয়োজিত শান্তিরক্ষীরা। ুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুসমাজের সাথে সম্পর্ক পুন:স্তাপন করা মোট কথা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার কাজটি করে থাকে এই মিশনচলা কালীন সময়ে। একটি সহিংস পরিস্থিতি থেকে আস্থা ও বিশ^াস ফিরিয়ে আনার কাজটি করে থাকে মিশন সদস্যবৃন্দের। অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করে থাকে মিশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত শান্তিরক্ষীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল, রাস্তা, ইত্যাদি অবকাঠামো সংস্কার ও নির্মাণে কাজ করে থাকে শান্তিরক্ষীরা। স্থানীয় পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থায় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করার দায়িত্বও গ্রহন করে থাকে।
শান্তিরাক্ষীরা যে কাজগুলি করে থাকে সেগুলি কিন্তু আমাদেরকে জাতি হিসাবে গর্বিত করে। জাতিসংঘের আমাদের শান্তিরক্ষীরা আমাদের গর্ব কারণ তারা আমাদের দেশকে এই সকল মানুষগুলি আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। দেশের মাটিতে আমরা দেখেছি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন দূর্যোগে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম -এর মাধ্যমে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি থেকে জাতিকে পথ দেখিয়েছে । বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে ও উন্নয়নে তাদের অবদানও কিন্তু কম নয়। জাতির প্রয়োজনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে সেটি কিন্তু প্রশংসার দাবী রাখ্।ে আমাদের পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত উদ্যোগের ফলেই আমারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পাারি। সৈন্য প্রেরণে শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এটি আমাদের জন্য গর্র্বে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা আমাদের গর্ব। তাদের সফলতা আমাদের আমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছে একটি নতুন পরিচয়ে।
লেখক: উন্নয়নকর্মী