ডায়াবেটিসে ভুগছেন? নিয়ন্ত্রণে ৫ কার্যকর উপায়

5
Spread the love


মিলি রহমান।।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮৩০ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। এই দীর্ঘস্থায়ী বিপাকীয় রোগে রক্তে গ্লুকোজ বা শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়, রক্তনালী, চোখ, কিডনি ও স্নায়ুতে গুরুতর ক্ষতি করতে পারে। তাই রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


ডায়াবেটিসের নানা ধরন থাকলেও, কিছু জীবনধারাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। নিচে এমন ৫টি কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো:

১. স্বাস্থ্যকর খাবার খান

সুষম আহার এবং সময়মত খাবার খাওয়া রক্তে শর্করার ওঠানামা কমাতে সহায়ক। খাবারের তালিকায় রাখুন লিন প্রোটিন, সম্পূর্ণ শস্য, ও স্বাস্থ্যকর চর্বি। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (এডিএ) পরামর্শ দেয়, খাবারের অর্ধেক অংশ যেন থাকে নন-স্টার্চি সবজি যেমন পালং শাক বা ব্রোকলি। এছাড়া নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার যেমন বার্লি, গ্রিক দই (চিনি ছাড়া), ওটস এবং বিনস খাওয়া যেতে পারে।

২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

ব্যায়াম ইন্সুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে, যার ফলে কোষগুলো গ্লুকোজ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি গতির এরোবিক ব্যায়াম (যেমন হাঁটা বা সাঁতার) করার পরামর্শ দেওয়া হয়। খাবারের পরে ছোট ছোট হাঁটা রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি রোধে সাহায্য করে। এছাড়াও, সপ্তাহে দু’দিন শক্তিবর্ধক ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যায়। তবে যেকোনো নতুন ব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন


শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন, যদি বেশি পরিশ্রম করেন তাহলে আরও বেশি পানি পান করা দরকার। ২০২১ সালের একটি পর্যালোচনা গবেষণায় দেখা গেছে, পর্যাপ্ত পানি পান করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। পানি শরীর থেকে অতিরিক্ত শর্করা মূত্রের মাধ্যমে বের করে দিতে সহায়তা করে। চিনি ছাড়া চা বা ফল-মূল দিয়ে ইনফিউজড পানি পান করাও উপকারী।

৪. ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন

ঘুমের অভাবে ইন্সুলিন উৎপাদন এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটে। ঘুমের ঘাটতি কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে। তাই প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা মানসম্পন্ন ঘুম জরুরি। নিয়মিত ঘুমের রুটিন বজায় রাখা এবং ঘুমের আগে মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার কমালে ঘুমের মান উন্নত হয়।

৫. ক্রোমিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

এই দুইটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে জড়িত। ক্রোমিয়ামের উৎস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে মুরগির মাংস, বার্লি, শাকসবজি এবং বাদাম। ম্যাগনেসিয়াম ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সাহায্য করে। এর জন্য খেতে পারেন পালং শাক, কুমড়োর বীজ, স্কোয়াশ, টুনা মাছ, অ্যাভোকাডো, বিনস এবং কলা।

সঠিক জীবনধারা গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অবশ্যই উচিত।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া