ঢাকা অফিস।।
বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধের ঘটনায় গতকাল বুধবার দিনভরই রাজধানী ছিল দৃশ্যত অচল। এ সময় পথচলতি মানুষ যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগে পড়েন। রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে অসহনীয় যানজট ছিল। এ সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত যানবাহন-গাড়ি সড়কে আটকে থাকতে দেখা যায়। বাধ্য হয়ে গণপরিবহনের যাত্রীদের অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। বিকাল ৫টায় অফিস ছুটির পর বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাস্তায় নেমেই প্রচ- যানজটের কবলে পড়েন।
তিন দফা দাবিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুরান ঢাকা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগেই পুলিশ শাহবাগ ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এবং কাকরাইল মসজিদের সামনে হেয়ার রোড বন্ধ করে দেয়। এতে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, যার চাপ পড়ে অন্যান্য সড়কে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জবি শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছলে পুলিশ তাদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যেতে বাধা দেয়। এতে সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় কাকরাইল মসজিদের সামনে দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে মৎস্য ভবন মোড়ে নিয়ে যায়। সেখানেও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এতে মৎস্য ভবন মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে প্রেসক্লাব, পল্টন, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, গুলিস্তান, মতিঝিল, কাকরাইল, বাংলামটর ও আশপাশের সড়কে প্রচ- যানজটের সৃষ্টি হয়।
জবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের আগে দুপুর ১২টার দিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হওয়ার ঘটনায় ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এতে ঢাবি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক দিয়েও যান চলাচল ব্যাহত হয়,
যার চাপ পড়ে বিশ^বিদ্যালয়ের বাইরের সড়কগুলোয়।
ওদিকে দুপুর ২টার দিকে বাংলাদেশের সর্বস্তরের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ঢাকার শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। এতে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শাহবাগমুখী সব যানবাহন কাঁটাবন থেকেই ঘুরিয়ে পলাশী মোড় ও হাতিরপুলের দিকে পাঠায় ট্রাফিক পুলিশ। এতে সায়েন্সল্যাব থেকে চাঁনখারপুল মোড়, গুলিস্তান থেকে চার্চ কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিকাল ৫টায় অফিস ছুটির পর বেরিয়েই যানজটের কবলে পড়েন। এ সময় সড়কে যানজটের চাপ গিয়ে পড়ে মেট্রোরেলের ওপর। মেট্রোরেলেও গতকাল দুপুরের পর তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। রাত ৮টা পর্যন্ত এই চাপ ছিল মেট্রোরেলে।
সাভার পরিবহনের হেলপার মিরাজউদ্দিন গতকাল বিকাল ৩টায় প্রেসক্লাবের সামনে বলেন, সদরঘাট রওনা দিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে প্রেসক্লাব মোড়েই আটকে আছি। কখন বাস সামনে যেতে পারবে, জানি না।
বিকাল ৩টায় রমজান পরিবহনে থাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সেলিম বলেন, কলাবাগান এলাকা থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত আসতে এক ঘণ্টা লেগেছে। যাবেন মালিবাগ। কিন্তু কখন মালিবাগ পৌঁছতে পারবেন, বলতে পারছেন না।
রাত ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিলেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। আর প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়ক বন্ধ ছিল। ফলে এই এলাকার সড়কগুলো বন্ধের চাপ গিয়ে পড়ে পাশর্^বর্তী এলাকার সড়কে।
এর আগে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথের দাবিতে গতকাল সকাল ১০টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবন ঘেরাও করেন তার অনুসারীরা। প্রথমে তারা সেখানে মানববন্ধন শুরু করেন। এতে নগর ভবনের সামনের সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা সড়ক ছেড়ে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
বঙ্গবাজার থেকে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে দুপুর ১টায় রওনা দেন আলী আহম্মেদ নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যাবেন মগবাজারে। কিন্তু আধাঘণ্টা ধরে তিনি হাইকোর্ট মোড়েই আটকে ছিলেন। পরে বাধ্য হয়ে বাইক থেকে নেমে হেঁটে সেগুনবাগিচা হয়ে তিনি মগবাজার আসেন।-আমাদের সময়