অনুমতি ছাড়াই প্লাটিক বোতলে কেরু কোম্পানির অ্যালকোহল বাজারজাত!

33
Spread the love


স্টাফ রিপোর্টার
সরকার প্লাস্টিক বোতলকে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক’ নির্ধারণ করলেও উল্টো চিত্র দেশের অন্যতম অ্যালকোহল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডে। সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই প্লাস্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করছে। ফলে এতে যেমন পরিবশের ওপর বিরূপ পড়বে, তেমনি অবৈধভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখছেন সচেতন নাগরিক ও পরিবেশ সংগঠকরা।
তবে কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের দাবি, তারা যথাযথ নিয়ম মেনেই প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড প্লাস্টিক বোতলে ১০০০ মিলিলিটার ও ৫০০ মিলিলিটার আকারে দেশী লিকার হিসেবে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে আবেদন করে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন, অর্থ ও পরিকল্পনা) মোহাম্মদ মামুন মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পরিবেশ বান্ধব বোতলের ধরণ নির্ধারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের শর্তে বোতল ব্যবহারের অনুমতি দেন। পরে কেরু কোম্পানি বিষয়টি অনুমোদনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করে।
ওই আবেদনের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী ১২ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানান, পেট বোতলে মদ বাজারজাতকরণের পূর্বে পরিবেশগত ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উম্মুক্ত দরপত্রের (ওটিএম) মাধ্যমে প্লাটিক বোতল ক্রয় করে কেরু কোম্পানি অ্যালকোহল বাজারজাত করবে। ওই প্লাটিক বোতল প্রস্তুতকারকদের পরিবেশ ছাড়পত্র থাকলেও কেরু কোম্পানির ডিস্টিলারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নেই। এছাড়া সরকার প্লাটিক বোতলকে ‘সিঙ্গেল ইউজ প্লাটিক’ নির্ধারণ করেছে। এ অবস্থায় ডিস্টিলারি প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ ছাড়পত্র গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। তবে প্লাটিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি না মিললেও কেরু কোম্পানির পূর্ব আবেদনেই সম্মতি দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সর্বশেষ গত ২৮ এপ্রিল অধিদপ্তরের উপ পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ হাবীব তৌহিদ ইমাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ অনুমতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাফজুর রহমান মুকুল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মদ স্বাস্থের জন্য এমনিতেই ক্ষতিকর। তারপরও সেটি যদি প্লাস্টিক বোতলে হয়, তা হবে মরণঘাতি। এতে মাইক্রোপ্লাস্টিক সহজেরই শরীরে প্রবেশ করবে। তাই প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার ও ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-রিচালক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, কেরু কোম্পানি থেকে প্লাষ্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের অনুমোদন চেয়েছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়নি। এটা করা হলে কোম্পানি আইন ভঙ্গ করেছেন।
তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পত্রে বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া প্লাষ্টিক বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের কোন সুযোগ নেই।
প্লাষ্টিকের বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরণের কোন সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মোঃ সাদিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এমন কোন অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। যদি কেউ করে থাকে সেটি অবৈধ। প্রথমত: প্লাষ্টিক একটি ক্ষতিকর দ্রব্য। যিনি ওই পাত্রের দ্রব্য গ্রহণ করবেন তিনি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তেমনিভাবে পরিবেশেরও ক্ষতি হবে।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপক (এফএল) মোঃ রাজিবুল হাসান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই প্লাষ্টিক(পেট) বোতলে অ্যালকোহল বাজারজাত করা হচ্ছে। পানি প্লাস্টিক বোতলে বাজারজাত করতে পারলে অ্যালকোহল বাজারজাতকরনেও বাধা থাকার কথা নয়।