হঠাৎ দাঁতে ব্যথা হলে যা করতে পারেন

6
Spread the love


ডা. জেবিন জান্নাত জুঁই।।

দাঁতে ব্যথা হওয়ার সময়জ্ঞান নেই, মানে যে কোনো সময়, যে কোনো অবস্থায় হঠাৎ করেই শুরু হতে পারে। নানা কারণেই এ ব্যথা যখন-তখন তখন শুরু হতে পারে। তবে যেসব কারণে দাঁতে বেশি ব্যথা করে থাকে তা হলো-মুখগহ্বর, মাড়ির রোগ এবং পেরিপিকাল বা পেরিওডেন্টাল সংক্রমণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়া। দাঁতের এ ব্যথা ক্রমাগত, কুঁচকানো ব্যথা থেকে ধারালো এবং অবিরাম ব্যথা করতে পারে। কখনও কখনও এতে মাড়ি ফুলে গিয়ে সংবেদনশীলতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যখন মুখের ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিড তৈরি করে, যা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে, তখন এটি দাঁতের ক্ষয় ঘটাতে পারে। এটিও ব্যথা ও সংবেদনশীলতার কারণ হতে পারে।


মাড়ির রোগ হলো মাড়ির টিস্যুর একটি সংক্রমণ, যা ব্যথা, প্রদাহ এবং দাঁতের ক্ষতির কারণ হতে পারে। দাঁতের ফোড়া হলো একটি পুঁজভর্তি থলি, যা দাঁত বা মাড়ির টিস্যুতে তৈরি হয়। চিকিৎসা না করা গহ্বর বা মাড়ির রোগের কারণে হয়। দাঁত ভাঙা বা ফাটা দাঁত তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি স্নায়ুটি উন্মুক্ত থাকে। সংক্রামিত রুট ক্যানেলের কারণে ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ভেতরের অংশে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম হলে ব্যথা ও ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে।

ব্রুক্সিজম বা দাঁত কিড়মিড় করার ফলে দাঁত ও চোয়ালে ব্যথা এবং সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে। দাঁতের সংবেদনশীলতা তখনই ঘটে, যখন দাঁতের এনামেল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যা দাঁতের সংবেদনশীল ভেতরের স্তর উন্মুক্ত করে দেয়। এছাড়াও আরও নানা কারণে দাঁতে ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে প্রথমেই অভিজ্ঞ দন্তরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। নইলে ব্যথার কারণে প্রাত্যহিক জীবনে ছন্দপতন ঘটতে পারে। তবে তার আগে সাময়িক সমাধান হিসেবে ব্যথা কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন, যা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নয়।

ঘরোয়া চিকিৎসার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

লবণ-পানির কুলি : এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা-চামচ লবণ মিশিয়ে কুলি করুন। এটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং মাড়ির ফোলাভাব কমায়। দিনে ২-৩ বার এটি করলে ব্যথা থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া যায়।

লবঙ্গ বা লবঙ্গ তেল ব্যবহার : লবঙ্গের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও ব্যথানাশক গুণ রয়েছে। একটি লবঙ্গ দাঁতের কাছে রেখে কিছুক্ষণ চিবানো বা তুলায় লবঙ্গ তেল লাগিয়ে ব্যথার স্থানে লাগালে দ্রুত ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।

বরফের সেঁক : এক টুকরো বরফ একটি পাতলা কাপড়ে পেঁচিয়ে দাঁতের ব্যথার স্থানে ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখুন। এটি ব্যথা কমানোর পাশাপাশি ফুলে যাওয়া কমাতেও সাহায্য করে থাকে।

রসুনের পেস্ট লাগানো : রসুনে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান থাকে। একটি রসুন থেঁতো করে সামান্য লবণ মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় লাগালে ব্যথা কমে যেতে পারে।

চা-ব্যাগ প্রয়োগ : কালো বা সবুজ চায়ের ব্যাগ গরম পানিতে ভিজিয়ে ঠান্ডা করে দাঁতের ব্যথার জায়গায় চেপে ধরুন। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা খুব বেশি অসুবিধা হয়, তাহলে দ্রুত ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

লেখক : দন্তরোগের চিকিৎসক

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম

০১৭০৭৮৬৫০৯৬; ০১৮৮৮২৭৪৩৪৮