আসক্ত কিশোর-কিশোরী # মেধা শূন্য হচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীরা # সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা # নীরব ভূমিকায় প্রশাসন
মো: রাজু হাওলাদার।।
জুয়া হচ্ছে এক ধরণের প্রতারণার ফাঁদ। আর এ ফাঁদে পড়ে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য কিশোর-কিশোরী। সারারাত মোবাইলে অনলাইন জুয়ার আসরে মিলিত হয় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
জুয়া খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ বা বস্তু যা পুরস্কার হিসাবে ধার্য করা হয়। যেমন- অনলাইন ক্যাসিনো, অনলাইন লটারির টিকিট বা স্কাচ কার্ড কেনা, খেলাধুলা সম্পর্কিত বাজি ধরা ইত্যাদি। বিভিন্ন অ্যাপ খুলে চালানো হয় অনলাইন জুয়া, যা খেলা যায় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা। আর এর ফলে খুলনাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বেকার যুবকসহ অনেকেই অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকেই কৌতূহলবশত অনলাইন জুয়া খেলা শুরু করলেও পরে নেশায় পড়ে যাচ্ছে। ঠিক যেমনটি হয় মাদকের ক্ষেত্রে।
অনলাইন জুয়ায় মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়া খেলার টাকা লেনদেন করছে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই অতি সহজে মোবাইল বা কম্পিউটারে জুয়া খেলার অ্যাপ দিয়ে ঘরে বসেই অ্যাকাউন্ট খুলে অনলাইনে জুয়া খেলতে পারে। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য জুয়ার সাইটগুলো কমিশনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। এদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত হতে দেখা যায়। অনলাইন জুয়াড়িদের একটি চক্র দেশের বাইরে থেকে এসব বিজ্ঞাপনের কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতিটি জুয়ার সাইট দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হওয়ায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড গ্যাম্বলিং মার্কেট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে শুধু অনলাইন জুয়ার বাজারমূল্য ছিল ৬ হাজার ৩৫৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৩ সালে তা প্রায় ১১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তবে বিগত সালের তুলনায় ২০২৫ সালে এই বাজার ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যাদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। ফলে আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছেন লাখ লাখ তরুণ-তরুণী।
বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া বিভিন্ন রকমের ক্রিকেট বা ফুটবল বাজি, অনলাইন ক্যাসিনো, অনলাইন লুডু বা অন্যান্য গেমস, লটারি বা প্রতিযোগিতা। এছাড়াও Bet365, Betbuzz, FairExch9, Ges Dreamz444.com, KzFAIR 247, Betwinner Ges 1xbet । এগুলো সাধারণত মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচালিত হয় ও মোবাইল ব্যাংকিং বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়।
অনলাইন জুয়া খেলার সামাজিক প্রভাব বেশ গভীর ও এটি সমাজে বিভিন্ন ধরণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পারিবারিক সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, তরুণ প্রজন্মের ক্ষতি, সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি, মাদক ব্যবসায়ীদের মতো জুয়াড়িরাও সমাজ, দেশ, জাতি ও পরিবারের শত্রু। তাই দেশ, সমাজ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। এ জুয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাও জরুরি। সর্বোপরি অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দলসহ সবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ১৯৭২-এর সংবিধানেই জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করা হয়। সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র জুয়া খেলা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া, পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭ অনুযায়ী, জুয়া খেলার জন্য ব্যবহৃত স্থান বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অনলাইন জুয়া খেলার ওয়েবসাইট, লিংক, এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো বন্ধ করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।