ঢাকা অফিস।।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নতুন টাকা না মিললেও রাস্তার ধারে ফুটপাথে কচকচে নোটের সরবরাহে ঘাটতি নেই। গ্রাহকরা নতুন নোট পাচ্ছেন, তবে চড়া দামে। ১০ টাকা মূল্যমানের ১০০টি নতুন নোট অর্থাৎ ১ হাজার টাকার বিপরীতে গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। আগে সাধারণত ২ টাকা বেশি লাগতো। তবে টাকা পণ্য না হওয়ায় বেশি দরে লেনদেন অবৈধ। বিক্রেতাদের দাবি, তারা আগের বছর কিনে রাখা নোট বিক্রি করছেন। অবশ্য গ্রাহকরা বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করেই নতুন টাকার ব্যবসা করছেন বিক্রেতারা।
ব্যাংক পাড়া নামে খ্যাত রাজধানীর মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে এবং গুলিস্তান এলাকায় দেখা গেছে, সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে ও গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের সামনে সারি সারি ছোট টেবিল ও টুল নিয়ে বসেছেন অর্ধশত টাকা বিক্রেতারা। তারা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি দামে নতুন টাকা বিক্রি করছেন।
একটি ১০ টাকার বান্ডিলে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা চান এক বিক্রেতা। অর্থাৎ ১ হাজার টাকার নতুন ১০ টাকার নোট নিতে হলে মোট ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। ১০ টাকার নোটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সেজন্য এই নোটের দামও বেশি। ৫ টাকার এক বান্ডিলের জন্য ৩০০ টাকা, ২০ টাকার বান্ডিলের জন্য ২৫০ টাকা, ৫০ টাকার বান্ডিলের জন্য ২৬০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, অবৈধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের একটা সম্পর্ক রয়েছে। নতুন টাকার বিক্রির ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হারে কমিশন পান বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা। মূলত তিন ধাপ পার হয়ে নতুন টাকা গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে। প্রথমত শাখা থেকে কমিশনের শর্তে দালালদের হাতে নতুন নোট বিক্রি করেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় ধাপে সেই টাকা নিয়ে এসব দালালেরা রাস্তার পাশে নিয়ে জড়ো করে। তৃতীয় ধাপে সেখান থেকে তারা দোকানদার নিয়োগ দিয়ে সাধারণ জনগণের কাছে টাকা বিক্রি করে। সরজমিন এসব তথ্যের প্রমাণও পাওয়া গেছে। তবে এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি বিক্রেতারা।
সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে জাবের নামে এক গ্রাহক বলেন, ঈদ উপলক্ষে বাচ্চাদের দেয়ার জন্য ১০ টাকার নোটের দুটো বান্ডিল নিলাম। ঈদের দিন সকালবেলা নামাজের পরে সালামি দেয়ার সময় নতুন টাকা দিলে ওরা খুশি হয়। এবার ব্যাংকে টাকা দিচ্ছে না। তাই এখানে কিনতে এসেছি। কিন্তু প্রচুর দাম। আগের ঈদের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, সরকারি নির্দেশনার কারণে ভল্ট থেকে নতুন টাকা ছাড়া বন্ধ আছে। বাজারে যেসব টাকা দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আগে থেকেই হয়তো তারা সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। অবৈধ টাকার এই লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে প্রশাসন বা পুলিশের সহায়তা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব বন্ধ করবে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। আর ওইসব বিক্রেতার টাকার উৎস কোথায়, কারা দেয়, তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন টাকা না পাওয়ায় আমরা গ্রাহকদের দিতে পারি না। কিন্তু রাস্তার ধারে সেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে বের করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার; পাশাপশি ব্যাংকারদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।
ঈদ উৎসবে দীর্ঘ ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সেলামিতে নতুন টাকা দেয় অনেকে। এ কারণে বিশেষ দিনটির আগে চাহিদা বাড়ে ঝকঝকে টাকার। চাহিদাকে সামনে রেখে প্রতিবছর নতুন টাকা বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবারো ২১১ কোটি টাকা ছাড়ার কথা ছিল। ১৯শে মার্চ থেকে নতুন নোট বিতরণের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতিবছর কমছে নতুন টাকা ছাড়ার পরিমাণ। ৫ই আগস্ট দেশের রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের পর টাকার নকশায় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই টাকা বাজারে আসতে আরও মাসদেড়েক সময় প্রয়োজন। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবারের ঈদে নতুন টাকা ছাড়ছে না।
