শাপলা চত্বরে গণহত্যা: হাসিনা-ইমরানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

13
Spread the love

ঢাকা অফিস।।
২০১৩ সালের ৫ ও ৬ই মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরসহ সারা দেশে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে তাদের নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে। এ মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ৯ জন আসামির মধ্যে চারজন বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। তাদের হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি পাঁচজন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরেকটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে আগামী ১২ই মে চারজন আসামিকে হাজির এবং এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, গাজী এম এইচ তামিম, মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, তারেক আব্দুল্লাহ ও শাইখ মাহাদী।

যে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা হলেন- ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার থাকা চারজন আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও পুলিশের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম। তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শাপলা চত্বরের গণহত্যার পটভূমি তৈরি করেছিল গণজাগরণ মঞ্চ। গণজাগরণ মঞ্চ বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, কালচার, সংস্কৃতির বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল। গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা সশরীরে হেফাজতের গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল বলে তদন্ত সংস্থার কাছে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে ইমরান এইচ সরকার তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, প্রাইম মিনিস্টার থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র‌্যাবের প্রধান, পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বৈঠক করে, শাপলা চত্বরের পরিচালিত অভিযানের পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছিল। সে কারনে তার বিরুদ্ধে আমরা ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের বাক্‌ পরিবর্তনকারী একটা ঘটনা ছিল শাপলা চত্বরের গণহত্যা। বাংলাদেশের ধর্মীয় অধিকারের ব্যাপারে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ যে সোচ্চার ছিল, এই গণহত্যার মাধ্যমে প্রতিবাদের সর্বশেষ জায়গাটুকু চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এই গণহত্যায় যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের বেশির ভাগই ছিল মাদ্রাসার ছাত্র, এতিম শিশু-কিশোর, কোরআনের হাফেজ। এমনকি এসব হত্যাকাণ্ডের পরে তাদের অজ্ঞাতনামা হিসেবে কবর দেয়া হয়েছে। মৃতের সংখ্যা নিরূপন করতে দেয়া হয় নাই। তাদের পরিবারের কাছে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে যে তাদের সন্তানরা এখানে এসে মারা গেছে, এটা তারা প্রকাশ না করে। মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এই গণহত্যার সংখ্যা প্রকাশ করায় অধিকারের প্রধান নির্বাহী আদিলুর রহমান খানকে কারারুদ্ধ এবং সাজা দেয়া হয়। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।

ট্রাইব্যুনাল অনেক পর্যালোচনার পরে, এই গণহত্যাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এ অভিযোগকে তদন্তের অধীনে নিয়ে এসেছে এবং বিচারের ব্যাপারে তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন চিফ প্রসিকিউটর।
হেফাজতের আন্দোলনের মৃত্যুর সংখ্যা কতো, তা তদন্তাধীন। তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরেই নিশ্চিত সংখ্যা বলা যাবে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়াও হাসিনার নির্দেশে এই গণহত্যা হলেও, পার্লামেন্টে তিনি বলেছিলেন যে হেফাজতের কর্মীরা রঙ মেখে শুয়ে ছিল। তিনি এ ব্যাপারে জানার পরেও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি সহ হাজার হাজার কর্মকর্তা সেদিন এই গণহত্যায় অংশ নিলেও আমরা টপ কমান্ড স্ট্রাকচারকে বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। আজকে এই টপ কমান্ডারদের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

এদিকে যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, তাদের নাম ট্রাইব্যুনাল গোপন রাখলেও কীভাবে আসামিরা পরোয়ানার ব্যাপারে জেনে যায় এবং পলায়ন করে, সে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের নিয়ন্ত্রণে নেই বলে জানান তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনেকগুলো স্টেজ পার হয়ে কার্যকর করতে হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে এক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যাতে এটা প্রকাশিত না হয়।

জানা যায়, গত ২৭শে নভেম্বর শাপলা চত্বরের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫০ জনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে অভিযোগ দাখিল করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।