খুলনাঞ্চল রিপোর্ট।।
চলতি বছরের শেষে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আশাবাদী হলেও এখন নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে স্পষ্ট কোনো বার্তা আসছে না। বরং নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা, নির্বাচন কমিশন, সেনাপ্রধানের বক্তব্যে তারা আশাবাদী। তবে সরকারের অন্যদের বক্তব্য দেশি-বিদেশি নানা মহলের কথাবার্তায় ষড়যন্ত্র দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী এপ্রিল থেকে সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি নিয়ে ‘নির্বাচনী ষড়যন্ত্র’ প্রতিহত করতে মাঠে থাকবে বিএনপি। গত সোমবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উঠে আসার পর নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অন্যদিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ জন্য বিএনপিসহ দেশের ৩৪ রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। আজ ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলোর কাছে মতামত চেয়েছে দলটি। তবে বিএনপি এই মতামত দিতে আরও দুই-একদিন সময় নেবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে দলের ভেতর থেকে। দলটির নেতারা বলেন, তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ। সম্প্রতি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলব, চলতি মার্চ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিন। তা না হলে রাজনৈতিক দলগুলো বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
গত সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের কথা উঠে এসেছে নেতাদের আলোচনায়। বৈঠকে গত সাত মাসের বিভিন্ন কর্মকা- পর্যালোচনা করে নেতারা নিশ্চিত করেছেন একটি ইসলামি দল ও একটি নতুন দলের নেতারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেল্টার দিচ্ছেন। ফলে দেশে ঘুষ ও দুর্নীতি কমেনি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে নেতারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার গড়িমসি করছে, যা তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। তারা এটাও মনে করেন যে অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে নয়; বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদেরকেই শক্তি মনে করে। তারা সহজে ক্ষমতা ছাড়বে বা নির্বাচন দেবে- এমন মনে হচ্ছে না। তারা এনজিওর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে সরকার বাধ্য হয়, যেন ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে না পারে- এ জন্য মাঠে থাকার পক্ষে মত দেন নেতারা। তারা বলেন, নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে একটা ধাক্কা দিতে হবে। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা-মহানগরে সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে বিএনপি তার অবস্থান জানান দিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জেলা-মহানগরে সভা-সমাবেশ করবে বিএনপি। একই সঙ্গে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে তারা যা বুঝতে পেরেছেন, তাতে তাদের কাছে দেশের জন্য ভালো কোনো বার্তা নেই। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতাকে আরও সতর্ক থাকতে আহ্বান জানানো হয়। নেতারা বলেন, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রদের নতুন দল আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিচ্ছে। এরা এখন একযোগে বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছে। ফলে ঘুষ ও দুর্নীতি কমেনি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, খুব শিগগির মানুষ বলতে শুরু করবে যে হাসিনার আমলেই ভালো ছিলাম, যা হতে দেওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, গণমাধ্যমে একটি বিশেষ দলকে নিয়ে কেউ নিউজ করে না। শুধু বিএনপিকে নিয়ে নিউজ করা হয়। ওই দলকে কারা টাকা দেয়, কারা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে দেয় সেটিও জাতির সামনে প্রকাশ করার অনুরোধ করেন। গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, একটি বিশেষ দল সম্পর্কে সাংবাদিকরা কিছু লিখছে না। যতটুকু পারেন ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে শুধু বিএনপির বিরুদ্ধে লিখছেন। পর্দার অন্তরালে অনেক কিছুই ঘটছে, সেগুলো কিন্তু আপনার লিখছেন না। কোন ব্যবসায়ী কোন দলকে কত টাকা দেয়, কোন দল কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, কোন ব্যবসায়ীকে বাঁচাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন, এগুলো কিন্তু লিখছেন না।
বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপের আমন্ত্রণ কিংবা সংবিধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বসতে পারে কিনা বৈঠকে এমন প্রশ্নও তোলা হয়েছে। নেতারা বলেন, তারা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) রাষ্ট্রের কোন পর্যায়ের অথরিটি? আবার সংলাপ হবে কোনো দলগুলোর সঙ্গে? শুধু নিবন্ধিত নাকি অনিবন্ধিত সংগঠনও থাকবে। নিবন্ধিত হলে হতো জামায়াত এবং ছাত্রদের নতুন দল এই সংলাপে আমন্ত্রণ পাবে না। এসব বিষয়ে স্পষ্ট হতে হবে। এখানে সংলাপ হতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের। সংস্কার ইস্যুতে একদিন, দুদিন সংলাপ হতে পারে। সংস্কার ইস্যুতে অনিবন্ধিত দলের সঙ্গে সংলাপ হলে তো বহু সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে।
বৈঠকে এক নেতা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য ২৫০ বা তারও বেশি পৃষ্ঠার বই সরবরাহ করেছে। এখানেই প্রশ্ন- বাংলাদেশের সংবিধানের যে বই এবং নির্বাচন কমিশনের বিধি তা কত পৃষ্ঠার? এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় দলের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চিঠির জবাব দেবে বিএনপি। এ জন্য কিছুটা সময় নেবে দলটি।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানান, সংস্কারের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামত চেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৩ মার্চের মধ্যে দলগুলো মতামত জানাবে বলে তারা আশা করছেন। দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর শুরু হবে আলোচনা।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রাষ্ট্রসংস্কারের ৩১ দফার আলোকে ঐকমত্য কমিশনের চিঠির জবাব প্রস্তুত করতে গত মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাউদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুই-একদিন সময় নিয়ে তারা ঐকমত্য কমিশনের চিঠির জবাব দেবেন।-আমাদের সময়