কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
সাত বিয়ে করা কুষ্টিয়ার সেই রবিজুল ইসলামের (৪০) বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) তাঁর বাবা ও স্ত্রীকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি সিরাজ শেখ নামে এক ভুক্তভোগীর বাবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এতে রবিজুল, তাঁর বাবা আয়নাল ও স্ত্রী মোছা. রুবি খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রবিজুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় মাইক্রোবাসচালক ছিলেন। পরে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। ১৫ বছর পর দেশে ফিরে সাত বিয়ে করে আলোচনায় আসেন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, দুই বছর আগে সদর উপজেলার জগতি কৃষকপাড়ার সিরাজ শেখের ছেলে তানজিলকে ইতালিতে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়া পাঠান রবিজুল। সেখানে সাত-আট মাস কাজ করানোর পর তাঁকে মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন।
অপর দিকে ছেলেকে মুক্ত করতে ধারদেনা করে ৩৪ লাখ টাকা রবিজুলের হাতে তুলে দেন সিরাজ শেখ। কিন্তু দফায় দফায় টাকা নেওয়ার পরও দালালেরা ছেলেকে মুক্তি দেয়নি। প্রায় ১০ মাস পর ১১ ফেব্রুয়ারি বন্দিশালা থেকে ছাড়িয়ে লিবিয়ায় এক পরিচিতজনের কাছে রাখা হয়েছে তানজিলকে। এখন দেশে ফিরতে বিমানভাড়া জোগাড় করতে পারছেন না তিনি।
বাবার মানত রাখতে ‘সাত বিয়ে’ করেন লিবিয়াফেরত রবিজুলবাবার মানত রাখতে ‘সাত বিয়ে’ করেন লিবিয়াফেরত রবিজুল
সিরাজ শেখ জানান, সুখের সংসার ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন রবিজুল। তানজিল কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। প্রলোভন দেখিয়ে ছেলেকে ইতালি পাঠানোর নাম করে লিবিয়া পাঠানো হয়েছে। মাফিয়াদের কাছ থেকে ছেলেকে ছাড়াতে ভিটেমাটি বিক্রি করে এখন থাকছেন সরকারি জায়গায়।
সিরাজ শেখ বলেন, ‘ছেলেকে ছাড়াতে দফায় দফায় মোট ৩৪ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দিই। এর মধ্যে কিছু টাকা যমুনা ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখায় জমা দিই। এরপর টাকা চাইলেও আর দিতে পারিনি। অবশেষে ১১ ফেব্রুয়ারি তানজিল বন্দিশালা থেকে ছাড়া পায়। তাদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হতো না। টাকার জন্য সব সময় নির্যাতন চালানো হতো।’
সিরাজ শেখ আরও জানান, মাফিয়া চক্রের হোতা রবিজুল একসময় লিবিয়ায় থাকলেও বর্তমানে দেশে সক্রিয়। তাঁর সাতটি বিয়ে হয়েছে এবং বর্তমানে পাঁচ স্ত্রীকে নিয়ে আত্মগোপনে আছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে রবিজুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ওসি মেহেদী হাসান জানান, ভুক্তভোগী এক যুবকের বাবা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে রবিজুলের বাবা ও স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।