হাসিনার প্রত্যর্পণ: প্রয়োজনে দিল্লিকে ‘তাগাদা’ দেবে ঢাকা

1
Spread the love


খুলনাঞ্চল রিপোর্ট
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ভারতকে যে চিঠি দিয়েছে, তার সঙ্গে ‘দরকারি সব কাগজপত্র’ পাঠানোর কথা বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম।
তিনি বলেছেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে ভারতকে ওই চিঠির বিষয়টি আবার মনে করিয়ে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত চুক্তিতে উল্লিখিত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (দলিলাদি) ও তথ্যাদি ভারত সরকারকে প্রেরণ করা হয়েছে।”
কী কী কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, “কূটনৈতিকপত্রের সঙ্গে সেট অব ডকুমেন্টস সংযুক্তি হিসেবে গেছে। এটার মধ্যে কী কী জিনিস আছে, এটা যারা পাঠিয়েছেন, তারা ভালো বলতে পারবেন। “কিন্তু আমি দেখেছি যে, এটার সঙ্গে অনেক কাগজপত্র গেছে। তো আমরা ধারণা করি, যা যা কাগজ এখানে থাকা দরকার, সবগুলো সেখানে আছে। হিসাব করা প্যাকেজ পাঠানো হয়েছে।”
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে।
এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।

প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্র্বতী সরকার।
ওই সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠানোর অবস্থানে আছে ভারত সরকার। ঢাকার চিঠির জবাব দিতে দিল্লি কয়েক মাস সময় নিতে পারে– এমন কথাও বলা হয় সেসব প্রতিবেদনে।
এরপর প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, উত্তরের প্রত্যাশায় অপেক্ষা করবে ঢাকা। সরকারের ‘রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক’ সিদ্ধান্ত হলে ‘তাগিদপত্র’ পাঠানো হবে।
এটি কূটনৈতিক, নাকি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “দুটোই। আপনারা জেনে থাকবেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিমাইন্ডার একটা পাঠানো হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন মনে করবে যে, এটা সঠিক সময়, তখনই এটা পাঠানো হবে।”
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা উত্তর প্রত্যাশা করে যাব। আপনারা জানেন যে, এখন পর্যন্ত ওদের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাইনি, কিন্তু আমরা উত্তর প্রত্যাশা করেই যাব।”
জুলাই-অগাস্টে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জড়িত’ থাকার বিষয়ে জাতিসংঘ যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে চাপ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে কি-না, সেই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।
উত্তরে মুখপাত্র রফিকুল বলেন, “প্রতিবেদনটির যে অংশগুলো প্রকাশ্যে এসেছে, এটা যে কোনো মানুষের মনে নাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং আমি বলব, আপনার প্রশ্নের উত্তর আমার বক্তব্যের মধ্যে লুকায়িত আছে।”
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ভারতের সঙ্গে শেয়ার করা হবে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের বিষয়ে প্রতিবেদন ভারতকে কেন শেয়ার করা হবে?
“প্রকাশিত বিবৃতি-প্রতিবেদনে সেখানে এখনই অনেক ক্লু আছে। কী করতে হবে বা কার দায় কী রকম। সেখান থেকে যে যার মত করে নিজস্ব ব্যাখ্যা করা বলেন, তাদের করণীয় যেটা আছে, সেটা ঠিক করবে।”

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপড়েন চলছে। বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক তলব করেছে ঢাকা-দিল্লি।
এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ডিসেম্বেরে ঢাকা সফর করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের যোগ দিতে দুবাই থেকে শুক্রবার ওমানের মাসকটে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সম্মেলনের ফাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে আবারও তার বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন পর্যন্ত এটুকু আমরা জানি। আশা করছি যে, এটা হবে।”