স্টাফ রিপোর্টার
পতিত সরকারের আমলে খুলনার দাপুটে নেতাদের সিংহভাগই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এক সময়ে এদের অনেকের দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি ও লুটপাটে কাঁপতো মহানগরীসহ জেলা। ৫ আগস্ট পরবর্তী এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গত ছয় মাসে হত্যাকাণ্ডসহ প্রায় এক ডজনের বেশী মামলা হলেও পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ধরা পড়েনি তাদের সহযোগীরাও। ফলে এসব ব্যক্তিদের হাতে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিরা অনেকটাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০০৭ পরবর্তী সময়ে খুলনায় একছত্র আধিপত্য গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অত্যাচার, দাপট, দখল, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, ভূমিদখল, টেণ্ডারবাজি এমন কী হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। বাড়ি থেকে জমি, ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন কোন কিছুই তাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি। তাদের অত্যাচারে খুলনার অনেকেই তাদের বাড়ি ছাড়াও হয়েছেন। অনেকে বছরের পর বছর যাবত জেলে বন্দি জীবনযাপন করছেন। অনেকে তাদের সহায় সম্বলহীন হয়ে খুলনা ছেড়ে অন্যত্র রয়েছেন। আবার কেউ কেউ পতিত সরকারের দলীয় নেতাদের অত্যাচার, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় জেল জুলুমের কারণে নি:স্ব হয়ে পড়েছেন।
অনুসন্ধানে যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম পলাশ, সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল সুজন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেব দুলাল বাড়ৈই বাপ্পি, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল, যুবলীগ নেতা হাফিজুর রহমান হাফিজ, কাজী কামাল, জেলা যুবলীগের সভাপতি চৌধুরী রায়হান ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান সোহাগ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক মো: ইমরান হোসেন, যুবলীগ নেতা শওকত হোসেন ওরফে কালা শওকত, সোনাডাঙা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা, শেখ পরিবারের আস্থাভাজন কাজী ফয়েজ আহমেদ, যুবলীগের মীর মাসুদ, কালা রিপন, গাজা সিরাজ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আব্দুর রাজ্জাক, সেখ জুয়েলের বন্ধু পরিচয়দানকারী তারেক, এপিএস ড. সাঈদুর রহমান, খানজাহান আলী থানা এলাকার যুবলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাজজাদুল রহমান লিংকনসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর। ইতিমধ্যে দৈনিক খুলনাঞ্চলের অনুসন্ধানে এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ বেড়িয়ে এসেছে।
জানাগেছে, মহানগরী খুলনাসহ বিভিন্নস্থানে অভিযুক্তরা নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। একাধিক ব্যক্তির কয়েকটি বাড়ি-গাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। কেউ কেউ শূণ্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের কেউ কেউ দীর্ঘ ১৫ বছর শেখ পরিবারের সদস্যদের আর্শিবাদপুষ্ট হয়ে সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাদেরমধ্যে কারো কারো সেই সম্পদ এখন তাদের নিকট আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙক্ষীরা আগলে রাখছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এসব ব্যক্তিরা যে কোন সময় খুলনা অশান্ত করে তুলতে পারে। পুলিশের মধ্যে এখনও তাদের অনুসারীরা থাকায় কোন অভিযানই ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
সুত্রের অভিযোগ, এদের অনেকে খুলনার পুলিশ প্রশাসনের বেশ কিছু কর্মকর্তার সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন। আবার বেশ কয়েকজন সাবেক কাউন্সিলর রয়েছেন এই তালিকায়। তারাও আড়ালে থেকে তাদের বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা খুলনা অশান্ত করতে নানা রকম চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিগত দিনে নির্যাতিত রাজনৈতিক নেতারা বলেন, গোটা খুলনায় পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে প্রায় ৮৬ ভাগই এখনো আওয়ামী লীগের সমর্থিত। তাদের সাথে আশ্রয় প্রশয়ে ও নিবিড় যোগাযোগের মাধ্যমে খুলনাকে অশান্ত করার পায়তারা করছে।
বর্তমান রাজনৈতিক দলের নেতারা পতিত সরকারের আত্নগোপনে থাকা সন্ত্রাসী, দলখদার, চাঁদাবাজ ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া তারা যাদের ছত্রছায়ায় রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।