ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই প্রস্তুতি চলছে ইসির

1
Spread the love


ঢাকা অফিস।।

আগামী ডিসেম্বর মাস সামনে রেখে এবং সরকারপ্রধান ঘোষিত সময়সূচি ধরে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা উন্নয়ন সহযোগীদের জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উন্নয়ন সহযোগী ১৭টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ইসির বৈঠক হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে ইসির অবস্থান তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই আমরা (ইসি) প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন প্রস্তুতি নেই, একটিই প্রস্তুতি (জাতীয় নির্বাচন)।’ অন্যদিকে, নির্বাচনে সব ধরনের সহায়তার আশ^াস দিয়ে ইউএনডিপির প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেছেন, ‘আশা করছি, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা নির্বাচন হবে।’


বৈঠকের বিষয়ে ইসি মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উন্নয়ন সহযোগী ১৮টি দেশের মিশনপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, সঙ্গে ছিল ইউএনডিপি। প্রথমেই নির্বাচন নিয়ে আমরা কী করছি, তা তাদের জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ কোন পর্যায়ে আছি, সে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ইউএনডিপি ও উন্নয়ন সহযোগীরা কী ধরনের সহায়তা করবে, সে ধারণা দিয়েছেন। তাদের ভোটের সময়সূচি অবহিত করা হয়েছে। আমরা বলেছি, এটা ইসির হাতে নয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন হবে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এমন কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছি না, যা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে। তবে, হ্যাঁ কিছু বিষয় হয়তো থাকবে, আমরা সেসব নিয়ে ভাবছি না।

এক প্রশ্নে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্যে বলেছিলেন, যদি অল্প পরিমাণে সংস্কারসহ নির্বাচন করতে হয়, সেখানেই যদি রাজনৈতিক মতৈক্য গিয়ে দাঁড়ায়; তাহলে এ বছরের শেষ নাগাদ ডিসেম্বরে হতে পারে। আর যদি আরেকটু সংস্কারের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে ২০২৬ সালের জুন নাগাদ নির্বাচন করা সম্ভব। আমরা বলেছিলাম, ইসিকে নিকটতম তারিখ ধরেই প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের

ভিন্ন প্রস্তুতি নেই, একটিই প্রস্তুতি। তবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনে সরকারের অনুরোধ এলে, তখন ইসি বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, পাঁচ স্তরের স্থানীয় নির্বাচন করতে হলে এক বছরের মতো সময় লাগে। আমাদের সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়নি, কিছু হয়েছে। এ কন্ডিশনাল বিষয়গুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট টাইমলাইন দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা ধারণা করি, সরকার আমাদের হাতের টাইমগুলো বিবেচনায় নেবেন এবং তারা যদি মনে করেন জাতীয় নির্বাচনকে কোনো একটা টাইমফ্রেম করে তারপর কতটুকু অনুশীলন করা যায়- তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন কতটুকু হবে, কোন কোন ইনস্টিটিউশনের হবে- সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তখন আমরা বলতে পারব- এটি জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে কী করবে না।

ইতিহাসের সেরা নির্বাচনের প্রত্যাশা

পরে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন গত ডিসেম্বরে সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কী ধরনের কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া যায়, সেজন্য জানুয়ারিতে ইউএনের একটি মূল্যায়নকারী দল দুই সপ্তাহ সফর করে। তাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাথমিক কিছু আলোচনা করেছি। ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে ইসিকে শক্তিশালীকরণ, ভোটার নিবন্ধন, ভোটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগীরা আলোচনা করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়তা করছি। আশা করছি, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন। আমাদের এ নিয়ে কিছু করার নেই।

ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি, ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক, ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রো, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিসতিয়াগা, কানাডার হাই কমিশনার অজিত সিং, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার, অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার ক্লিনটন পোবকে, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, নেদারল্যান্ডসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স আন্দ্রে কার্স্টেনস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মারি মাসদুপুই, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-সিক, ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন এবং তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত রামিস সেন।

ইসির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন প্রধান নির্বাচন নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন, নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।