আতঙ্কের নগরী খুলনা: সদর থানা ঘেরাও আজ

289
Spread the love


সৈয়দ রানা কবীর।।
গণঅভ্যূত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পালিয়ে যাওয়া পরবর্তী খুলনার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, হত্যা-চাঁদাবাজদের দাপটে কাঁপছে শিল্পনগরী খুলনা। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও প্রকৃত হত্যাকারী, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারছে না। ফলে নগর জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন চরম আতংক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামলেই অধিকাংশ মানুষ নগরীতে চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছেন। সর্বশেষ চার মাসে সংগঠিত ১২ হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। ফলে মহানগর ও জেলা বিএনপি সমাবেশ করে কেএমপির সকল থানার ওসিদের প্রত্যাহারের দাবি তোলেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ছাত্রদল নেতা সাহিলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটায় ফের নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি। বিএনপির ছাত্র সংগঠন মহানগর ছাত্রদল এবার বিক্ষোভ মিছিল ও থানা ঘেরাও কর্মসুচি দিয়েছে।


মহানগর ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী আহবায়ক ইস্তিয়াক আহমেদ ইস্তি খুলনাঞ্চলকে থানা ঘেরাও কর্মসুচির কথা স্বীকার করে বলেন খুলনার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি তলানিতে এসে পৌছেছে। পুলিশ প্রশাসন দায়িত্বশীল না হওয়ায় সন্ধ্যা নামলেই আতঙ্কেও নগরীতে পরিনত হয় খুলনা। তিনি বলেন পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় না হলের আরো কঠোর কর্মসুচি দেয়া হবে। অপরদিকে নাগরিক নেতারা বলেছেন, বিগত দিনগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সুবিধাভোগীদের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এসব ব্যক্তিদের খুলনার আইন-শৃঙ্খলা বিভাগ থেকে অপসারণ করতে হবে।


খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, মহানগরী খুলনা ও জেলায় হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, মারামারি, চুরিসহ অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গত চার মাসেই হত্যা ও মারামারিতে ব্যবহৃত অসংখ্য অস্ত্রের ব্যবহার হলেও এখনো একটি অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর সঠিক কারণ ও প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডগুলোর কারণও অনুসন্ধান করতে পারনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নগরীতে পুলিশের টহল ও তৎপরতা তেমন নেই বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। সবমিলিয়ে খুলনার সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন চরম আতংক বিরাজ করছে। নগরী ও জেলায় আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ মানুষ ও নাগরিক নেতারা।
সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় ২৫ জানুয়ারি রাত আটটায় নগরীর তেঁতুলতলা মোড় এলাকায় একটি চা দোকানের সামনে কয়েকজন অস্ত্রেধারী সন্ত্রাসীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব সরকারকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে। ২০ জানুয়ারি নগরীর সদর থানার ২১ নম্বর ওয়াড যুবদলের নেতা মো: মানিক হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। অপরদিকে ২০ জানুয়ারি বিকালে নগরীর সদর থানার ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা মো: মানিক হাওলাদারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন সন্ধায় কমার্স কলেজের সামনে ছাত্রদল কর্মী নওফেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। সে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাহবুবুর রহমান লিটুর পুত্র। নাগরিক নেতাদের অভিযোগ, খুলনা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেএমপি কমিশনারের বক্তৃতার কয়েকঘন্টা পরই নওফেলকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে নগরীর সদর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মিস্ত্রীপাড়া রসুলবাগ মসজিদের সামনে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক শাহিন শেখ নামের এক যুবদল নেতাকে গুলি করে জখম করে দুর্বৃত্তরা। তার অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সবশেষ বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) নগরীর চানমারি এলাকায় ছাত্রদল নেতা সাহিলের ওপর হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা। মারাত্ম আহত সাহিলকে প্রথমে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, হত্যাসহ কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম্য’র কারণে নগরবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। আর নাগরিক নেতারা বলেন খুলনায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে পারছেনা পুলিশ।


মহানগরীসহ জেলার নয় উপজেলায় অপরাধমুলক কর্মকান্ড আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিপূর্বে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলো যেমন এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টার সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা খুলনার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির অভিযোগ করেন। এ দিকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারন উদঘাটন করতে বা অস্ত্রধারীদের আটক করতে না পরলেও সাংবাদিকদের মাঝে কাল্পনিক কল্পকাহিনির বর্ননা দিতে পুলিশ ঠিকই পারছেন বলে নাগরিক নেতারা অভিযোগ করেন।


যেমন অর্নব হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে তার বাবার ঠিকাদারী ব্যাবসা, নারী সংশ্লিষ্ট বিষয়, সন্ত্রাসী গ্রুপের কোন সংশ্লিষ্টতাসহ নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়। তবে তার ও পরিবারের দাবি অর্ণব খুবই শান্ত শিষ্ট ছেলে, বাম রাজনীতি বা সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলনা। তাকে ২৫ জানুয়ারি বিকালে নগরীর ইসলাম কমিশনার মোড়ের বাসা থেকে বের হয় অর্ণব সরকার। তাকে রাত আটটার দিকেও তাকে বসুপাড়া এতিম খানা মোড়ে দেখা যায়। নিহত অর্ণব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ পড়ছিল। তিনি তার বাবা নীতিশ সরকারের ঠিকাদারী পেশায়ও সহযোগিতা করতেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে অর্ণব বড়। তার কেন রাজনৈতিক বা সন্ত্রাসী সংশ্লিষ্টতা নেই।


এ হত্যাকাণ্ডের পর দায়েরকৃত মামলার পর পুলিশ চারজনকে আটক করলেও প্রকৃত হত্যাকারীদের আটক করতে পারেনি।গত চার মাসে ১২ খুনের ঘটনায় নাগরিক নেতাদের উদ্বেগ।


তবে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মো: মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, যুবদল নেতা মানিক হাওলাদার, অর্নবসহ অন্য সব হত্যাকাণ্ডের কারন উদঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানান। সকল হত্যাকাণ্ডে ঠিকাদারী ব্যাবসা, নারী সংশ্লিষ বিষয়, সন্ত্রাসী গ্রুপের কোন সংশ্লিষ্টতাসহ নানা বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান। তিনি বলেন, নগরীর সব এলাকায় টহলসহ তদন্ত কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। এদিকে যুবদল, ছাত্রদলনেতা, অর্নব হত্যাকাণ্ডসহ খুলনায় গত চার মাসে বারোটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী ও নাগরিক নেতারা।


নাগরিক নেতারা জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তলসহ অত্যাধুনিক একটিও অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। ফলে নগরীতে অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে কাঁপছে খুলনাবাসী। নগরীতে পুলিশের টহল তেমন না থাকায় নগরবাসী নির্বিঘ্নে চলাচলে আতংকিত রয়েছেন।