স্টাফ রিপোর্টার
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডির মধ্যেই পাঠোদ্ধার করছে রাকিব ভূঁইয়া। স্কুলের ছোট্ট বারান্দায় বিচরণ করলেও স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। ইউটিউব দেখে ইচ্ছে জাগে একটি রোবট বানানোর। শখ পূরণে ধীরে ধীরে এগোতে থাকলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় অর্থ সংকট। অভাব-অনটনের সংসারে পড়াশোনার খরচ চালানোই দায়, সেখানে এত বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এর পরও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে অদম্য এ স্কুলছাত্র। টাকা জোগাড় করতে চালায় ভ্যান। এক পর্যায়ে স্বপ্ন সত্যি হয়; সবাইকে চমকে দিয়ে নিজের একটি কৃত্রিম বন্ধু বানায় সে। কথোপকথন, অগ্নিনিরাপত্তা, খাবার সরবরাহ ও গ্যাস লিকেজ জানান দিচ্ছে তার রোবট। রাকিবের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদর গ্রামের বরণপাড়া এলাকায়। সে দামোদর মুক্তময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই রোবট বানানোর স্বপ্ন দেখার কথা জানায় এ স্কুলছাত্র। অর্থ সংকটের চেয়ে স্বপ্ন বড় ছিল জানিয়ে রাকিব বলে, ‘পড়াশোনার খরচই যেখানে ঠিকমতো চলে না, সেখানে রোবট বানানোর বিষয়টি প্রথম দিকে পরিবারের সদস্যদের কাছে পাগলামো মনে হয়েছিল। টাকা ছাড়া পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। তাই মাস ছয়েক আগে লেখাপড়ার পাশাপাশি উপার্জন শুরু করি। দিনের একটা অংশ বাবার ভ্যান চালাই। সেই টাকা দিয়ে মুরগির বাচ্চা কিনে বাড়িতে পালন করি। সেগুলো বড় হলে বাজারে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ কিনি। এভাবে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’
রাকিব জানায়, রোবটটি তৈরি করতে প্রায় পাঁচ মাস সময় লেগেছে। আর্থিক সংকটের কারণে এত সময় লেগেছে। পুরো টাকা উপার্জন করতে না হলে আরও আগেই সেটি তৈরি হতো। তার রোবট হাঁটাচলা, কথা বলা, আগুন লাগলে ও গ্যাস লিকেজ হলে সতর্কতামূলক ঘণ্টা বাজানো, খাবার পরিবেশন, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, হ্যান্ডশেক করা, স্যালুট দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করতে পারে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণও করা যায়। এ ছাড়া রোবটটি আগুন লাগলে বাড়ির পানির পাইপ লাইন চালু করতে পারে। জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বর, পার্শ্ববর্তী দমকল বাহিনীর কার্যালয় এবং রাকিবের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিতে পারে। এটি চলাফেরা করে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে। রোবটের দেহ তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিকের পিভিসি বোর্ড দিয়ে। বসানো হয়েছে একাধিক সেন্সর ও সাতটি ক্যামেরা। এমনকি অপরিচিত কেউ এর যন্ত্রাংশ খোলার চেষ্টা করলে ইলেকট্রিক শক দিয়ে আত্মরক্ষা করবে। স্থানীয় বাসিন্দা ও খুলনার বিএল কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনি রাকিবের রোবটটি দেখেছেন। এটি তাঁকে অভিভূত করেছে। এত অল্প বয়সে অভাবনীয় সাফল্যের জন্য এ স্কুলছাত্রকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি। দামোদর মুক্তময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম এ হালিম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাকিবকে সংবর্ধনা, ক্রেস্ট ও আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে ভালো করবে।’ কুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ফুলতলার কোনো স্কুলছাত্রের রোবট তৈরির খবর আনন্দের। রোবটটির আরও উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তিগতসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে।’