খুলনার স্টার জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয় : ক্ষমতার দাপটে বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক গাজী লুৎফর এখনও বহাল তবিয়তে

31
Spread the love


মো. জামাল হোসেন।।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনিমহলস্থ বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন স্টার জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতর্কিত ও বহুলালোচিত সহকারী শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) গাজী লুৎফর রহমান পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অবৈধ ক্ষমতার দাপটে এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলেও ধূর্ত প্রকৃতির এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। গাজী লুৎফর রহমান দিঘলিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি পদে রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, গাজী লুৎফর রহমান ২০০১ সালে স্টার জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাইমারি শাখায় ১৬তম গ্রেডের জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ২০০২ সালে মিল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিএড পাস করেন। বিজিএমসি’র নীতিমালা অনুযায়ী আট বছর পূর্তিতে কর্মচারী হিসাবে একটি টাইম স্কেল পান ২০০৯ সালে। ২০১০ সালের ৩০ জুন মিলের একটি নোট সিটের মাধ্যমে প্রাইমারি শাখা থেকে মাধ্যমিক শাখায় স্থানান্তর হন। পরবর্তীতে তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ লীগের প্রভাব বিস্তার করে অবৈধ ক্ষমতার দাপটে ১৬ তম গ্রেট থেকে মাধ্যমিক শাখার সহকারি শিক্ষক হিসেবে ১০ তম গ্রেটে উন্নীত হন। যেখানে মিলের বোর্ড মিটিং বা বিজেএমসি’র কোন অনুমোদন না থাকায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাণিজ্যিক অডিট হয়। অডিটে তার বিএড স্কেল বাতিল করে ১৬ তম গ্রেট কার্যকরের সুপারিশ এবং গ্রহণকৃত ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকাসহ বর্তমান পর্যন্ত অতিরিক্ত গ্রহণকৃত টাকা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিলে অডিটের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে গাজী লুৎফর রহমান নিয়োগের সকল প্রক্রিয়া সঠিক ছিল অথাৎ প্রাইমারি শাখার নিয়োগ সঠিক।
বাণিজ্যিক অডিট অধিদপ্তরের তৎকালীন উপ-পরিচালক পলাশ বাকচী স্বাক্ষরিত একপত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের ২৬ মে স্টার জুট মিলস লিমিটেডের প্রকল্প প্রধানের কাছে নির্দেশনার এ কপি এসে পৌঁছালেও এখন পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাজী লুৎফর রহমান মাধ্যমিক শাখার কোন পদোন্নতিপত্র বা সহকারি শিক্ষক কোন নিয়োগপত্র নেই। সহকারী মাধ্যমিক শাখায় শিক্ষক হিসেবে তিনি কখনো যোগদান করেননি। এমনকি তাকে রাজশাহী বিজিএমসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হলেও তিনি সেখানে যাননি।
সূত্র জানায়, প্লাটিনাম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আইয়ুব আলী নামে এক শিক্ষককে স্টার জুট মিলস স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে বদলি করেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে গাজী লুৎফর রহমান তাকে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব বুঝে দেননি। বরং ভয়ভীতি দেখিয়ে থেকে তাড়িয়ে দেন। গত ৫ আগষ্ট দেশ আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্ত হলেও স্টার জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয়টি পতিত সরকারের দোসর থেকে মুক্ত হতে পারেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক গাজী লুৎফর রহমান নিজেকে দিঘলিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি পদে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
উল্লেখ্য, স্টার জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) গাজী লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৯০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র চেয়ে মাথাপিছু ৫শ’ টাকা করে অতিরিক্ত ৪৫ হাজার টাকা গ্রহণের ঘটনায় বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ তাকে সতর্ক করেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর গাজী লুৎফর রহমানকে স্টার জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে রাজশাহী পাটকল উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং বিজেএমসির দপ্তর আদেশ মোতাবেক তাকে দু’ সপ্তাহের মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আজ অবধি কর্মস্থল ছাড়েননি তিনি।
স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কালাম আজাদ এ প্রতিবেদককে বলেন,তখন আমি ছিলাম না মিলে । গাজী লুৎফর রহমানের বিষয়টি বিজে এম সি ভালো বলতে পারবে।