ভারত সেকুলারিজমের নামে অন্য ধর্মের ওপর আঘাত করতে পারে না: মাহফুজুর রহমান

8
Spread the love


খবর বিজ্ঞপ্তি।।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় কটুক্তি করেই যাচ্ছে। ভারতের পুরোহিতদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার এখতিয়ার নেই। মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করে যে কথা বলেছেন, সেটা মুসলমান কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। রাসূল (সা.) কে কটুক্তির দরুণ ভারতকে চরম মূল্য দিতে হবে।

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে খুলনা সদর থানা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সিরাতুন্নবী (সা.) উপলক্ষে খুলনা প্রেসক্লাবের লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, কূটনৈতিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে। ভারত সেকুলারিজমের নামে অন্য ধর্মের উপর বারবার আঘাত করতে পারে না। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) কে মুসলমানগণ নিজের জান-মালের চেয়েও বেশি ভালবাসেন এবং এটা ঈমানের অংশ। সারাবিশ্বে নবীকে নিয়ে যারা অপমান করবে তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানরা প্রতিবাদ করেই যাবে। প্রয়োজনে নবীর মান ও ইজ্জত রক্ষায় মুসলমানরা নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিতে সবসময় প্রস্তুত। দেশ থেকে স্বৈরাচারী সরকার পালিয়েছে। ভারতের দালালদেরকেও ঈমানদার জনতা হঠাতে সময় নিবে না। ভারত বাক স্বাধীনতার নামে মুসলমানদের রাসুলকে নিয়ে অপমান করলে মুসলমানরা নীরবে বসে থাকবে না। তারা জীবন দিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করবে ইনশাআল্লাহ। তিনি অবিলম্বে ভারতকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান এবং কটুক্তিকারী পুরোহিতকে গ্রেপ্তার করে শাস্তির মুখোমুখি করুন।

সদর থানা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক শেখ মো. অলিউল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি এস এম হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সদর থানা সহকারী সেক্রেটারি আব্দুস সালাম, কাজী মাহফুজুর রহমান, বাইতুল মাল সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসাইন, আইন বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, থানা কর্ম পরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল ইসলাম, মজিবুল হক, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আমীর মাওলানা নাসির উদ্দিন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ডাক্তার হাফেজ মাওলানা সাইফুল্লাহ মানসুর, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আখতারুজ্জামান সুমন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আমীর মাওলানা সিরাজুল ইসলাম আল আমিন, ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আমীর মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ, ২১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন মল্লিক, ২২ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আরাফাত হোসাইন।

অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের কাছ থেকে বিজয়ীরা পুরস্কার গ্রহণ করেন। কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তব্য প্রতিযোগিতা এবং কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পুরস্কার দেয়া হয়। এর মধ্যে কুইজ প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার বিজয়ী নগদ ৫০০০ টাকা এবং বই, দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী নগদ তিন হাজার টাকা এবং বই, তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ী নগদ ২০০০ টাকা এবং বই পুরস্কার হিসেবে লাভ করেন।

এছাড়াও কুইজ প্রতিযোগিতার প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপ্ত ১২ জনকে একসেট করে বই উপহার দেয়া হয়। এছাড়া কুরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার জন্য প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং বক্তব্য প্রতিযোগিতার জন্য প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় জনকে একসেট করে বই পুরস্কার দেয়া হয়।

কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা হলেন- প্রথম স্থান মো. মাহমুদুল হাসান, দ্বিতীয় স্থান ফারজানা সুলতানা এবং তৃতীয় স্থান রাহাত ইসলাম। বক্তব্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন- হাফেজ মো. আসাদুল ইসলাম, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন আব্দুর রহমান সাইফ এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মাওলানা আলাউদ্দিন। কেরাত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন হাফেজ তরিকুল ইসলাম, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন অহিদুল ইসলাম এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেন মাওলানা আলাউদ্দিন। অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন খুলনার ঐতিহ্যবাহী টাইফুন শিল্প গোষ্ঠীর সদস্যরা।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, বিশ্ব মানবতার জন্য রহমত হিসেবে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.) কে পাঠিয়েছেন। ইসলামকে উপলব্ধি করতে হলে, কুরআনকে উপলব্ধি করতে হবে, ইসলামী আন্দোলনকে বুঝতে হলে কুরআন অধ্যয়নের পাশাপাশি রাসূল (সা.) এর সিরাত অধ্যয়ন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূল (সা.) এর সিরাত অনুধাবন করতে হবে। তিনি বলেন, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। ইসলামকে বিতর্কিত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে কুরআনের পাশাপাশি সিরাত অধ্যয়ন করতে হবে। ইসলামের আদর্শিক সৌর্ন্দয মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। খুলনার প্রতিটি ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। একজন দায়ির চরিত্রে নিজেদের চরিত্রবান করতে হবে।

অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আরো বলেন, সমাজ এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে আদৌ জ্ঞানের প্রয়োজন আছে কিনা সেটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, সেখানে পড়াশুনার প্রয়োজনীয়তা গৌণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো সেইভাবে তৈরি করা হচ্ছে। আসলে কী জাতি এমন স্বাধীনতা চেয়েছিল? আমরা এমন রাষ্ট্র কী চেয়েছিলাম?

তিনি বলেন, কুরআন সুন্নাহ যেখানে জ্ঞানের মূল হাতিয়ার, সেখান থেকে জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। তাই আমরা সবাই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছি। তিনি জ্ঞানার্জনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শুধু জ্ঞান অর্জন করলেই হবে না। বাস্তব জীবনের জ্ঞানও থাকতে হবে। শুধুমাত্র জ্ঞানার্জনই লক্ষ্য হতো, তাহলে আবুল হাকাম থেকে আবু জেহেল হতো না। শেষে প্রধান অতিথি সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতা ২০২৪ এর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন।

এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল বলেন, আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। ঘোর অমানিশার মধ্য দিয়ে আমরা দিন অতিবাহিত করছি। শিক্ষা ব্যবস্থায় মূল্যবোধ বলতে কিছুই নেই। দুই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা একাকার করে দেয়ার চুক্তি করে ফেলা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ একটাই, সেটা হচ্ছে রাসূল (সা.) এর দেখানো পথে চলতে হবে। তার সিরাত বেশী বেশী অধ্যয়ন করতে হবে। কার্যকরী দাওয়াত দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শেখ মো. অলিউল্লাহ বলেন, রাসূল (সা.) এর জীবনী আলোচনার সময় তার সংগ্রামী জীবন বাদ দিলে সেই আলোচনা পূর্ণাঙ্গ হবে না। রাসূল (সা.) যেমন একজন দায়ি ছিলেন, তেমনি সেখানে প্রধানও ছিলেন, রাষ্ট্র প্রধানও ছিলেন। রাসূল (সা.) তার কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। শিয়াবে আবু তালেবে বন্দী জীবন কাটিয়েছিলেন। তায়েফে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন। যদি বাধাই না আসে তাহলে কীসের দাওয়াত? এ কাজ করতে গিয়ে যুগে যুগে বাঁধা এসেছে, বাঁধা আসবে। তবুও আমাদের দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ ইসলামের বিজয় হবেই।