যশোর অফিস
যশোরের ভবদহে জলাবদ্ধতা এবার প্রকট রূপ নিয়েছে। জনজীবনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দিরে পানি উঠে গেছে। কাজকর্মহীন হয়ে পড়েছে ব ১৫ লাখের বেশি মানুষ। ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ। বেড়েছে পানিবাহিত রোগা বালাই। শ্বারদীয় পূজার উৎসবের নেই প্রস্তুতি।এবার যশোরে ৮০ মন্ডবে পূজা হচ্ছে না।
ভবদহ অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, পানির মধ্যে বসবাসের ভোগান্তি এবার ভয়াল রূপ নিয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এখনও নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর উদ্যোগ। পানি সরানোর একমাত্র সক্রিয় উপায় পাম্প দিয়ে সেচ। যার ওপর ভরসা করার আদৌ কোনো কারণ দেখছেন না দুর্ভোগ-ক্লান্ত ভবদহের মানুষ।
সামনে পূজা। নেই উৎসবের প্রস্তুতি। আর উৎসব সেভাবে আয়োজন করার সুযোগও নেই। অভয়নগরের সুন্দলীর বাসিন্দা সুব্রত মল্লিক বলেন, “পূজা চলে এসেছে অথচ উৎসবের প্রস্তুতি নেই। যশোরে এ বার ৮০ মন্ডবে পূজা হচ্ছে না।
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন,এবার মনিরামপুরের হরিদাস কাটির কুচলিয়া মন্দির, হাজিরহাট মন্দির, অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নের সব মন্দির, মহিশায়াহী ও কুলটিয়ার মন্দির হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। এর মধ্যেই পূজা স্বল্প পরিসরে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে।
অবিরাম বর্ষণ ও নদ-নদীর উপচে পড়া পানিতে তলিয়ে গেছে যশোরের ভবদহ অঞ্চলের তিন উপজেলার দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কলেজ রয়েছে। ১৫ দিন ধরে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
বিশেষ করে কেশবপুর ও মনিরামপুরের অবস্থা বেশি খারাপ। জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধের পথে। শুধু শিক্ষকরা বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছেন।
অতিবর্ষণের ফলে কেশবপুর উপজেলার শতাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। স্কুলের চত্বরসহ আশপাশে পানি থাকায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলার ১৪৪ গ্রামের মধ্যে প্রায় সব কটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বিদ্যানন্দকাটি রাসবিহারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এরই মধ্যে ভবনের নিচতলায় পানি উঠে গেছে। ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে দ্বিতীয় তলায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসতে পারছে না। ফলে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না।
মনিরামপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বেশির ভাগ স্কুলের শ্রেণিকক্ষ ও খেলার মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর, কুলটিয়া, মনোহরপুর ও দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।
অভয়নগর উপজেলার অন্তত ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক বাবলুর রহমান জানান, পাঠদানের কক্ষের ভেতরে পানি, অফিস কক্ষেও পানি। জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয় না চাইলেও বিদ্যালয় বন্ধ রাখতে হয়। এতে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের চরম সমস্যা হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক) আবুল কাশেম জানান, ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপাতত পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যাণার্জী বলছেন, জলাবদ্ধ অঞ্চলের পানি দ্রুত নিষ্কাশনের কাজ চলছে। এ জন্য নয়টি পাম্প চলছে।