স্টাফ রিপোর্টার
কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর খুলনাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত এবং প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। মেয়াদ বাড়ানোর পরও গত ৩০ জুন পর্যন্ত ৩৭ মাসে সেতুর নির্মাণকাজের মোট অগ্রগতি ছিল মাত্র সাড়ে ১৪ শতাংশ। কাজের এই ধীরগতির কারণে তৃতীয় দফায় দুই বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে অর্থাৎ ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু এখনো কাজের যে গতি তাতে তৃতীয় দফায় বাড়ানো সময়ের মধ্যেও সেতুর কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছে খুলনাবাসী।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা শহর থেকে দিঘলিয়া, গাজীরহাট ও তেরখাদা উপজেলাকে পৃথক করেছে ভৈরব নদ। তাই নদের দুই প্রান্তের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করতে ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর। ২০১৯ সালে ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ১৩১৬ দশমিক ৯৬ মিটার দীর্ঘ ও ১০ দশমিক ২৫০ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। প্রকল্পে কাজের অংশগুলো ছিল জমি অধিগ্রহণ ও সেতু নির্মাণকাজ। সেতু নির্মাণ প্যাকেজে ছিল ১২১৬ দশমিক ৯৬ মিটার সেতু, ১০০ মিটার স্টিল সেতু, ১৩৭৬ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক, ২ কিলোমিটার নতুন সড়ক, ৩৭৬০ মিটার বিভাজক, রক্ষাপ্রদ ৬ হাজার বর্গমিটার, দুটি ইন্টার সেকশন ও টোল প্লাজা নির্মাণ।
সূত্রটি জানায়, তিনটি প্যাকেজে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে সেতু নির্মাণ করছে করিম গ্রুপের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক এস এম নাজমুল বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পরই কাজ শুরু করা হয়। তবে সড়ক বিভাগ থেকে জমি ঠিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। কয়েক দফায় তাদের কাছে দিঘলিয়া উপজেলা অংশের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। শহর প্রান্তের জমি এখনো দেওয়া হয়নি। সেখানে এখনো উঁচু উঁচু বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে। ফলে দীর্ঘ এ সময়ে ঠিকভাবে কাজ করা যায়নি। সেই সঙ্গে সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এখন আগের রেটে কাজ করলে লোকসান হবে। এসব কারণে আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ কাজ করে ১১ শতাংশ বিল তোলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার (অধিগ্রহণ শাখা) মোঃ মোতালেব বলেন, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরকে দিঘলিয়ার অংশের জমি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে এবং ২০২৩ সালের শেষের দিকে দৌলতপুরের মহেশ্বপাশার অংশ হস্তান্তর করা হয়। এ প্রকল্পের কোনো জমিই বুঝে দিতে বাকি নেই।
সড়ক ও জনপদের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ইতিমধ্যে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে সেতুর ১০০ মিটার স্টিলের অংশ বাড়িয়ে ১৬০ মিটার, ১৪০টি পিসি গার্ডার পরিবর্তে স্টিলের গার্ডার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫০ মিটারের পরিবর্তে ১৩ দশমিক ৩০ মিটারের কথা বলা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা বাড়বে। তবে প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে আসেনি। সিদ্ধান্ত এলেই কাজ ফের শুরু করা হবে।