সাবেক শিল্পমন্ত্রী ১০ কোটি, শেখ হেলালরা তিন ভাই পেয়েছেন ৫০ কোটি টাকা
স্টাফ রিপোর্টার।।
খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের অব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পানির দরে অধিকাংশ যন্ত্রাংশ বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের টাকা ভাগবাঁটোয়ারা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মিলটির সাবেক শ্রমিকরা। অবিলম্বে এ টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় সম্ভাব্যতা যাচাই করে টেন্ডার প্রদানের আবেদন জানান তারা।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত মেশিন ও পুরোনো স্থাপনা বিক্রির দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ বিক্রির তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মেশিন, বয়লার, শত শত টন লোহালক্কড়, ওভারব্রিজের যন্ত্রাংশ, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ব্যবহৃত ভারী তামার তার প্রভৃতি। দরপত্র খোলা হয় ১ নভেম্বর। সেই সময় দরপত্র বিক্রি হয় ১৭টি। তবে অদৃশ্য কারণে দরপত্র জমা পড়ে মাত্র একটি। দরপত্র জমা দেওয়া সেই প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। ওই প্রতিষ্ঠানের নামেই কার্যাদেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মিল কর্তৃপক্ষ। সেই আলোকে ইতোমধ্যে মিলটিতে অবস্থান নিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। ৩৩ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত মিলটির বিভিন্ন অংশে একাধিক চৌকি করে পাহারা দিচ্ছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গার্ড।
সেখানে মিল কর্তৃপক্ষের লোকজনেরও প্রবেশ নিষেধ। এ বিপুল পরিমাণ মালামাল বিক্রির জন্য দর পড়ে মাত্র ৬৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অথচ মিলটির সাবেক কর্মকর্তারা দাবি করছেন, দরপত্র আহ্বান করা সমুদয় সম্পদের মূল্য কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা। নামমাত্র মূল্যে টেন্ডার ফেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাট করা হয়েছে। ক্রমাগত লোকসান এবং মূলধনের ঘাটতির কারণে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন। মিলের ৮৮ একর জমির মধ্যে ৫০ একর জমি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ২৭ আগস্ট জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, টেন্ডারের নামে মিলের অভ্যন্তরে শত শত কোটি টাকার মালামাল লুট করার চেষ্টা চলছে। এ লুট প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা ঘুস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মিলের বর্তমান এমডি আবু সাঈদ পেয়েছেন এক কোটি, তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ১০ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ৫ কোটি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ জুয়েল ও শেখ সোহেল পেয়েছেন ৫০ কোটি টাকা। এ বিপুল অঙ্কের টাকা অবৈধ লেনদেনের কারণে শিডিউল জমা দিতে পারেননি সাধারণ ঠিকাদাররা।
সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এত শিডিউল বিক্রি হলো অথচ জমা পড়ল মাত্র ১টি। এর রহস্য কী। মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা এই টেন্ডার বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। পরিষদের সদস্য সচিব আবুল কালাম বলেন, একদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লুটপাট করার পাঁয়তারা করছে, অন্যদিকে মিলের বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চুরি করে মিলের যাবতীয় যন্ত্রাংশ বিক্রি করছে। মাইক্রোবাসে করেই ৫০/১০০ কেজি করে লোহা ও তামার তার পাচার করা হচ্ছে।
টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অসহযোগিতা করেন মিলটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাঈদ। টেন্ডারসংক্রান্ত কোনো তথ্য তিনি দেননি। পরে আলাপচারিতার একপর্যায়ে তিনি বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর টেন্ডার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হয়। এর আগে দুবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তখনও কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়ে তৃতীয়বার মেসার্স ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং নামক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়। টাকা ভাগবাঁটোয়ারার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে ৮০/৯০ কোটি টাকা বাঁটোয়ারার কথা উঠেছে, আসলে তা নয়। ঠিকাদার হয়তো কাউকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে। সেসময় তো (৫ আগস্টের আগে) কেউ ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেনি। ২/১ কোটি টাকার লেনদেন হয়ে থাকতে পারে।