স্টাফ রিপোর্টার
উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে খুলনায় চলছে বিভিন্ন দফতরের একাধিক প্রকল্পের কাজ। সিটি করপোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক বিভাগ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক উন্নয়ন কাজ একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের কব্জায়। একসঙ্গে অনেক কাজ আটকে রাখায় কোনো কাজই ঠিকভাবে শেষ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বছরের পর বছর পার হলেও শেষ হচ্ছে না জনভোগান্তি। খুলনা মহানগরের অন্যতম প্রবেশদ্বার শিপইয়ার্ড সড়কের জন্য এক যুগের অপেক্ষা নগরবাসীর। ৪ কিলোমিটার সড়কটির পুনর্র্নিমাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্স। এক বছর মেয়াদি কাজ প্রায় তিন গুণ সময় পার হলেও অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। বিভিন্ন অজুহাতে কাজ বন্ধ ছিল অন্তত চার দফা। শুধু এই কাজে নয়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির সবগুলো কাজের চিত্র এমনই। কেন সবগুলো প্রকল্পের এমন বেহাল দশা, জানতে সময় সংবাদ ঘুরে দেখেছে বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সড়ক বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি উন্নয়ন কাজ এখন করছে মাহাবুব ব্রাদার্স। টাকার অংকে কাজের মূল্য ৫৫৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। খুলনা সিটি করপোরেশনের আধুনিক বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র এবং কুয়েট অ্যাপ্রোচ রোডের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৬ জানুয়ারি। পরিশোধন কেন্দ্রের কাজ হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। কুয়েট অ্যাপ্রোচ রোডের সড়ক সংস্কার শুরুই হয়নি, চলছে ড্রেন নির্মাণ। গত ৩০ জুনের মধ্যে কেসিসির বর্জ্য শোধনাগার কাজ শেষ না করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে সেই সময় দুই মাস বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নগরীর কেডিএ বিপণী বিতান নির্মাণ কাজ শুরু করে গত বছর, যা চলতি বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ।
অপরদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভবন নির্মাণ কাজও শেষ হওয়ার কথা ছিল গত এপ্রিলে। চার তলা ভবনের নীচতলার কাজই শেষ হয়নি এখনো। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে সড়ক বিভাগের একটি কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে, অপরটি চলমান। সব মিলিয়ে ভোগান্তি চরমে নগরবাসীর।
প্রতিষ্ঠানটির একসঙ্গে এত কাজ করার সক্ষমতা আছে কি না যাচাই করে জবাবদিহিতার আওতায় আনার পরামর্শ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের প্রধান অধ্যাপক খান মেহেদী হাসানের। কাজের এমন ধীর গতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে খুলনা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বারবার বলা হলেও তাদের অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।’ সার্বিক বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেদায়েতুল্লাহ বলেন, ‘তিনটি কাজ নিয়ে আমরা নানান ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। বাস্তব কারণে কাজে দেরি হয়েছে। চুক্তির অনেক পর শিপইয়ার্ড সড়কের জমি বুঝে পেয়েছি। ড্রেন নির্মাণের পরে দেখা গেছে, জমি অন্যের। সেই ড্রেন ভাঙতে হয়েছে। সড়কের সাববেজের কাজ শেষ। ওয়াসা সড়ক খুঁড়ে পাইপ বসাবে এ জন্য কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। আর বিপণি-বিতানের ওইখানে জায়গা খুব কম। এত পাইল তৈরি করে রাখার জায়গা নেই। তারপরও কাজ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কুয়েট অ্যাপ্রোচ রোডের জায়গায় ড্রেনের ওপর মানুষ ঘর-সীমানা-প্রাচীর নির্মাণ করেছে। এখন ড্রেন নির্মাণ করতে গেলে সেগুলো ভেঙে পড়ছে। কুয়েটও কিছু জায়গায় কাজে বাধা দিয়েছে। এসব কারণে গতি কম ছিল। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির কাজও দ্রুত শেষ হবে।’