হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির এক মাস :আজ শহীদি মার্চ

14
Spread the love


ঢাকা অফিস।।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে এবং আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণে আজ বৃহস্পতিবার ‘শহীদি মার্চ’ পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় সব ছাত্র-জনতাকে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আজ থেকে এক মাস আগে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেকেই বলছিলেন যে, আমরা বিজয় র‌্যালি করতে পারি কিনা। কিন্তু অধিকাংশ ছাত্র-জনতা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, বিজয় মিছিল করার সময় এখনো আসেনি। এই বাংলাদেশে যতক্ষণ না পর্যন্ত গণমানুষের বাংলাদেশ না হচ্ছে এবং মানুষ সাংবিধানিক অধিকারগুলো না পাচ্ছে; ততক্ষণ পর্যন্ত কোনোভাবেই বিজয় মিছিল করা প্রাসঙ্গিক নয়। তাই এই সময়ে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, শহীদ আবু সাঈদ থেকে শুরু করে যেসব ভাই শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণ করা।

সারজিস বলেন, যেসব ভাই-বোনেরা হাত হারিয়েছেন, পা হারিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মরণে ‘শহীদি মার্চ’ করতে চাই। আমরা চাইবÑ সব ছাত্র-জনতা এই শহীদি মার্চে অংশ নেবেন। এই মার্চে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে, কেমন সরকার চাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন ও চিন্তাগুলো ব্যানার ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ডে থাকতে পারে।’

কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ বিকাল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এই শহীদি মার্চ শুরু হবে। রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, কলাবাগান হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ যাবে। এরপর বিজয় সরণি, ফার্মগেট হয়ে কারওয়ানবাজার, শাহবাগ হয়ে পুনরায় রাজু ভাস্কর্য-জাতীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হবে।

শুক্রবার থেকে বিভাগীয় শহরে সমন্বয়করা সফর করবেন। জনগণের প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপদানের প্রচেষ্টা হিসাবে এ সফল করা হবে বলে। এ প্রসঙ্গে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে বিভাগীয় শহরে সফর করব এবং টিমভিত্তিক কিছু নীতিমালাগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করব। একই সঙ্গে জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করে, জনগণের যে চাওয়া সেটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাব। আগামীর বাংলাদেশ হবে জনগণের বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেকে দুর্নীতি, সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে; তাদের জন্যও সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।

এলাকা ও জেলাভিত্তিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি নেই। এ প্রসঙ্গে আবু বাকের মজুমদার বলেন, ঢাকা, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অল্প কয়েকটি কমিটি দিয়েছি। আমরা এলাকা, জেলাভিত্তিক কোনো কমিটি দিইনি। আমরা মনে করছি, যারা আমাদের পরিচয় ব্যবহার করে এসব কাজ করছেন, তারা আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এসব কাজ করছেন। কেউ যদি হীনউদ্দেশ্যে এসব কাজ করেন, তাদের যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সারাদেশে জেলা-উপজেলায় দুর্নীতি, চাঁদাবাজ, সিন্ডিকেট ও দখলদারত্বের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কাজ করে যাবেন বলে উল্লেখ করেন বাকের।

আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা মানুষের সংকেতকে ভাষায় রূপান্তর করে তা বাস্তবে পরিণত করতে চাই।

মৃত্যু ৬১৭, আহতদের বাইরে নেওয়া হচ্ছে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত-নিহতদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আহত-নিহতদের তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে তারা। এখন পর্যন্ত ৬১৭ জন মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করতে পেরেছে তারা। এ ছাড়া গুরুতর আহদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় দেশের বাইরে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাতজনকে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপকমিটির সদস্য সচিব তারেকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ১৭ হাজার ৯২৬টি কেস পেয়েছি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে এসেছে ১৫ হাজার ৫৯৬টি। আউটডোর কেস ১০ হাজার ৭৩৯ এবং ইনডোর কেস ৬ হাজার ৭৪৮। এ ছাড়া মৃত অবস্থায় যাদের হসপিটালে আনা হয়েছিল মেডিক্যালি ভেরিফায়েড ৪৩৯ এবং সর্বমোট মৃত ৬১৭। অঙ্গহানি বা পা হারিয়েছেন এমন সংখ্যা ২০১ জন।