ঢাকা অফিস।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ঠেকাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গণভবনে তার সঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। প্রধানমন্ত্রী আটক সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। গতকাল পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে দেয়া বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে। আমি আবারো বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনো আলোচনায় রাজি। তারা যে কোনো সময় (গণভবনে) আসতে পারে।
দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে।
পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিম ২০০৮ সালের আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। এরপর বহু সময় অনেক চিন্তাভাবনা করে এই সার্বজনীন পেনশন স্কিমটা আমরা চালু করেছি এবং সেখানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আমরা দিয়েছি। কারও দাবির অপেক্ষা না করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ আমি চাই, যারা এর সঙ্গে জড়িত, সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউই হোক- যারা অস্ত্রধারী ও জ্বালাও- পোড়াওসহ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সে সব ঘটনার তদন্ত ও বিচার হোক। শুধু ঢাকা নয়, যে কয় জায়গায় এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে। তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে আরও দুইজন জজ নিয়োগ দিয়ে তাদের কর্মপরিধি ও সময়টাও বাড়িয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, যাতে যথাযথভাবে এটার তদন্ত হয়। আমি চাই এ ধরনের অন্যায় বা হত্যাকাণ্ড যারাই ঘটাক, এর যথাযথ তদন্ত করে তার বিচার হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলছি, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত- সে যেই হোক অবশ্যই তার বিচার করা হবে এবং কারা জড়িত, তদন্ত করেই তা বের করা হবে।
তিনি উদাহরণ দেন, রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে (সাঈদ নামের শিক্ষার্থীর মৃত্যু)। যে পুলিশ সদস্য দায়ী তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। এ ঘটনার বিচার হবে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে যারা ছাত্র বা পরীক্ষার্থী ছিল- তাদের সবাইকে জামিনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গে যেসব ছাত্ররা নিরীহ, যারা খুন ও ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িত নয়, আমি তাদেরকে মুক্তি দেয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি এবং সেটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। চিহ্নিত দোষী ছাড়া বাকিদের আমরা মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আবারো আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার সঙ্গে যদি তারা বসতে চায়, তাহলে আমি বসতে রাজি। তারা যদি এখনও আসতে চায়, কথা বলতে চায় আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি। তাদের আর কি কি দাবি বাকি আছে- আমি সেটা শুনতে চাই এবং যেটা আমার সাধ্যের মধ্যে সেটা আমি পূরণ করতে চাই। শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাদের দাবি-দাওয়া আমরা মেনে নিয়েছি (কোটার দাবি পূরণ)। এখন আরও কিছু আছে কিনা- সেটা আমি শুনতে চাচ্ছি এবং আপনাদের সামনে আমি বলতে চাচ্ছি। দেশবাসীরও জানা উচিত যে, আমি কখনোই আমার দরজা বন্ধ করিনি। গণভবনের দরজা খোলা। যখনই এই আন্দোলনকারীরা কথা বলতে চায়, আলোচনা করে সমাধান করতে চায় আমি তাদের সঙ্গে নিজেই বসতে রাজি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. শফিকুর রহমান এমপি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ. ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, অধ্যাপক ড. মো. নিয়ামুল হক ভূঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর এমপি, ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, অধ্যক্ষ একেএম ফজলুল হক, ইঞ্জিনিয়ার এসএম খাবিরুজ্জামান, এডভোকেট আব্দুর রহমান হাওলাদার, ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু) অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা, এডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক, ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী, খায়রুল আলম প্রিন্স, এসএম মঞ্জুরুল হক ও মো. অহিদুল ইসলাম অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার দায়িত্ব পেলেন তিন নেতা: এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গতকাল ধানমণ্ডিতে দলটির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতা হলেনÑ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকসহ সাতজন সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, উপ-দপ্তর সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও সমন্বয়কদের সঙ্গে কখন বা কীভাবে আলোচনা হবে, সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।