‘৭১-এ লুঙ্গি খুলে ধর্ম যাচাই হতো, এখন মোবাইলে রাজনৈতিক আদর্শ দেখা হচ্ছে’

18
Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার।।


কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা, গুম, নির্যাতন ও আটকের প্রতিবাদে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে মানববন্ধন ও মৌন মিছিল করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষকরা।


বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বরে শিক্ষকরা মানববন্ধন করেন। গুলি চালিয়ে হত্যা-নিপীড়নের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকরাও। একই সময়ে কুয়েটের দুর্বার বাংলার সামনে মানববন্ধন করেন তারা।

মানববন্ধনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টিটেকচার ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ড. অনির্বাণ মুস্তাফা বলেন, ‘এ প্রজন্ম আমাকে শিখিয়েছে দাসত্বের শৃঙ্খল কীভাবে ভাঙতে হয়। এক্ষেত্রে আমার ছাত্ররাই আমার শিক্ষক। আমি এখানে বিচারের দাবি নিয়ে আসিনি কারণ রাষ্ট্র যখন গুলি করে তখন বিচার পাওয়া যায় না।’

মানববন্ধনে অন্য বক্তারা বলেন, ‘আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে তাদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছি। পাকিস্তান আমলে লুঙ্গি খুলে ধর্ম যাচাই করা হতো আর এখন মোবাইল ফোন দেখে রাজনৈতিক আদর্শ বিচার করা হচ্ছে। তাহলে পার্থক্য কোথায়? ছাত্রদের ম্যাচ ও বাসায় গিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর চলমান হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান তারা।

অপরদিকে কুয়েটে সাধারণ শিক্ষকদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হেলাল-আন-নাহিয়ান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহজাহান আলী, মানবিক বিভাগের অধ্যাপক ড. রাজিয়া খাতুন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জনাব মীর আব্দুল কুদ্দুস, ইসিই বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শরিফুল আলম প্রমুখ।

মানববন্ধনে ড. মো. হেলাল-আন-নাহিয়ান বলেন, ‘শিক্ষার্থীসহ নিরপরাধ মানুষের ওপর গুলি চালানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রত্যেকের হৃদয়ে আজ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবক, তাদের পিতৃতুল্য। আমরা অনেক মিডিয়ায় দেখেছি রাজপথে স্টুডেন্টদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর নিরপেক্ষ বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকাসহ সারা দেশে এমনকি গতকাল খুলনায়ও গণহারে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা সহিংসতায় জড়িত তাদের বিচার আমরা অবশ্যই চাই, কিন্তু এভাবে রাস্তায় যাকে পাচ্ছে গণহারে গ্রেফতার করছে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা থানায় গিয়ে দেখেছি আমাদের একজন ছাত্র কফিশপ থেকে বের হয়েছে, একজন বাবার জন্য ওষুধ কিনতে গেছে তাদের তুলে নেওয়া হয়েছে। যেভাবে শিক্ষার্থীদের থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এটা কোনোভাবেই কোনো কল্যাণকর রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না। স্বাধীনতার ৫ দশক পর আমরা চাই কল্যাণকর রাষ্ট্র। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা, গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধনে শিক্ষকরা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত দুই সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহসহ বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া হামলা ও সহিংসতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ সব শিক্ষার্থী ও অন্যদের প্রাণহানির ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনায় যে বা যারা জড়িত, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানোর পাশাপাশি আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানানো হয়। এছাড়া বেশ কিছু দাবিও তুলে ধরেন তারা।