সাতক্ষীরা আশাশুনি নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত

72
Spread the love


জিএম সাগর হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার।।

সাতক্ষীরা আশাশুনি খোলপেটুয়া নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে বালু খাদক খুরশিদ। গত ২৪ জুলাই বালু উত্তোলনের ব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় কে অবহিত করা হয়। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। গত এক সপ্তাহ যাবত বালু খাদক খুরশিদ ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে রাষ্ট্রের সম্পদ আহরণ তথা ভূগর্ভস্থ থেকে দেদারসে বালু উত্তোলন করছে। ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে অবৈধভাবে রাষ্ট্রের সম্পদ আহরণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ইতিপূর্বে নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনায় জাতীয় সহ একাধিক প্রিন্ট পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পরও কোন ভ্রুপক্ষেপ নেই প্রশাসনের। ভূগর্ভস্থ থেকে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করা সত্বেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট ইউএনও ও এসি ল্যান্ড। আইনের তোয়াক্কা না করেই বিধিবহির্ভূত ভাবে যত্রতত্র বিভিন্ন নদ নদী, ফসলি জমি, মৎস্য ঘের, জনবসতি থেকে অবাধে ড্রেজার মেশিন বলগেট দিয়ে বেপরোয়া ভাবে ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এমনকি প্রশাসন কে ম্যানেজ করে অবৈধ পন্থায় চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলার সদর ইউনিয়ন এর নাটানা “১০৫” নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” এর সম্মুখে খোলপেটুয়া নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে ড্রেজার মেশিন বলগেট দিয়ে বালু খাদক খুরশিদ বেড়িবাঁধের ২ কিলোমিটার রাস্তার কাজে ১০ টাকা ফুট চুক্তিতে ঠিকাদার মান্নান ও আব্দুল ওহাব এর নিকট বিক্রি করছে। রাস্তা তৈরির নিমিত্তে সরকারি বরাদ্দে ফুট প্রতি উচ্চ মুল্য নির্ধারন করা হয়েছে। অথচ অধিক লাভের আশায় বশিভূত হয়ে সরকার ঘোষিত বালু মহল থেকে বালু ক্রয় না করে নদীর ভূ-গর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন করে রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করছে যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত।
বালু উত্তোলনের ফলে যে কোন সময় ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করছেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বালু খাদক খুরশিদ আশাশুনি গ্রামের প্রয়াত আবুল হোসেন ঢালীর ছেলে। ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, অধিক মাত্রায় ড্রেজার মেশিন (বলগেট) দিয়ে ফসলি জমি, জনবসতি এমনকি নদ নদীর ভূ-গর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণী কুলে নেতিবাচক পরিবর্তন, ভূগর্ভস্থ পানি,বায়ু দূষণ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভূমি ধ্বসের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ দিনকেদিন বিপন্নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনে সৃষ্ট বায়ু দূষণে প্রতিনিয়ত মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে উদ্ভিদ ও প্রানী কুলের মধ্যে পরিবর্তন হওয়ার কারনে তাদের আবাসস্থল যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি তাদের খাদ্যের উৎসও ধ্বংস হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে মৎস্য প্রজনন প্রক্রিয়া ব্যপক হারে পাল্টে যাচ্ছে। নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পানি দূষণ ও নদী গর্ভের গঠন প্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন নদ- নদী ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। অবাধে বালু উত্তোলনের নিকটবর্তী স্থানে মাটির ক্ষয় হওয়ার পাশাপাশি মাটির গুনাগুন নষ্ট হচ্ছে। বালু উত্তোলনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে নলকূপের পানি পাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। বালু উত্তোলনের ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে ব্যপক হারে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। এ বিষয় আশাশুনি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদ হোসাইন এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে ড্রেজার মেশিন বলগেট দিয়ে আশাশুনি খোলপেটুয়া নদীর ভূ-গর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত বালু উত্তোলন বন্ধ আছে। আমি সরেজমিনে যেয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে কথা বলেছি তারা আমাকে কথা দিয়েছে ভূগর্ভস্থ থেকে আর বালু উত্তোলন করবে না। তিনি আরও বলেন, যদি বালু উত্তোলন করে তা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয় আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায় এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপকালে ড্রেজার মেশিন বলগেট দিয়ে অবৈধভাবে নদীর ভূগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। এদিকে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় সচেতন মহল সুশীল সমাজ সহ স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।