মিলি রহমান।।
এখন খুব বেশি দেখা না গেলেও জারুল আমাদের গ্রামবাংলার এক সময়ের অতি চেনা একটি গাছের নাম। বৃক্ষের নাম জারুল আর এর ফুলের নাম জারুল ফুল। আমরা যখন বসন্তকালের নানান ফুলের রূপে মুগ্ধ হই তখন জারুল তার সব শোভা নিয়ে গ্রীষ্মে ফোটে।
জারুল ফুল ইংরেজিতে Giant Crape-myrtle, Queen’s Crape-myrtle, Banabá Plant ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Lagerstroemia speciosa।
বাংলাদেশের নিম্নভূমির একান্ত অন্তরঙ্গ তরুদের অন্যতম হচ্ছে লেজারস্ট্রমিয়া গণের এই উদ্ভিদ। এটি মধ্যমাকৃতির পত্রমোচী বৃক্ষ। ম্লানধূসর মসৃণ কাণ্ডবিশিষ্ট জারুল ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পত্র বৃহৎ, ৬-৮ ইঞ্চি দীর্ঘ, আয়তাকৃতির মসৃণ ও দেখতে গাঢ় সবুজ। এর পাতার পিঠের রঙ ঈষৎ ম্লান। এর পত্রবিন্যাসবিপ্রতীপ। মঞ্জরী অনিয়ত, শাখায়িত, বহুপৌষ্পিক ও প্রান্তিক।
জারুলের ফুলের বেগুনি বর্ণ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি শোভন-সুন্দর তার পাঁপড়ির নমনীয় কোমলতা। ৬টি মুক্ত পাঁপড়িতে গঠিত এর ফুল। যদিও এর রং বেগুনি, তবুও অনেক সময় এর রং সাদার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতে এটি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তবে শুকনো এলাকাতেও এদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না।
মাঝারি আকৃতির এই বৃক্ষটি শাখা-প্রশাখাময়। এর লম্বাটে পাতাগুলো পত্রদণ্ডের বিপরীতে সাজানো থাকে। এই পাতাঝরা বৃক্ষ শীতকালে পত্রশূণ্য অবস্থায় থাকে। বসন্তে নতুন গাঢ় সবুজ পাতা গজায়। গ্রীষ্মে বেগুনি রঙের অসম্ভব সুন্দর থোকা থোকা ফুল ফোটে গাছের শাখার ডগার দিকে। একসঙ্গে অনেক ফুল থাকে।
জারুল ফুলগুলো থাকে শাখার ডগায়, পাতার ওপরের স্তরে। প্রতিটি ফুলের থাকে ৬টি করে পাঁপড়ি, মাঝখানে পুংকেশরের সঙ্গে যুক্ত হলুদ পরাগকোষ। গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরত পর্যন্ত তা দেখা যায়।
সুব্যবহৃত জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলের সন্ধান মেলে। জারুলের Lagerstroemia indica নামে ছোট একটি প্রজাতি রয়েছে, যা বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট ও কিশোরগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।
বড় জারুল গাছের কাঠ লালচে রঙের, অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান। ঘরের কড়ি-বরগা, লাঙল, আসবাবপত্র ইত্যাদি বহুবিধ কাজে জারুলের শক্ত, মসৃণ ও টেকসই কাঠ ব্যবহার করা হয়। জারুলের ভেষজ গুণও রয়েছে।
জারুলের ভেষজগুণ
(১) জারুল গাছের পাতা সিন্ধ করে ক্বাথ সেবন করলে জ্বর দ্রুত সেরে যায়।
(২) জারুল গাছের পাতা ও মূল প্রতিদিন শোয়ার আগে সেবন করলে অনিদ্রা কেটে যায়।
(৩) জারুল গাছের পাতা থেঁতো করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কাশি ও অজীর্ণতায় উপকার পাওয়া যায়।
(৪) জারুলের পাতার রস খেলে আমাশয় ভালো হয়।
ডেইলি-বাংলাদেশ/জিআর