স্টাফ রিপোর্টার।।
বছরের এপ্রিল-মে মাসে প্রচণ্ড দাবদাহ আবার শীত মৌসুমে কনকনে ঠান্ডা, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য এমনই। ভৌগলিক অবস্থান, জলাভূমি কম থাকা, কর্কটক্রান্তি রেখার খুব কাছাকাছি অবস্থানের কারণে চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়ার এই বৈশিষ্ট্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও আবহাওয়াবিদরা।
চলতি বছরের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ। বুধবার ও বৃহস্পতিবার (১৭ ও ১৮ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা দেশেরও সর্বোচ্চ। টানা তৃতীয় দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এই জেলায়। প্রচণ্ড দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা জেলার বাসিন্দাদের।
শুধু চলতি বছর নয়, আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর টানা প্রায় ১৩ দিন ধরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙায় রেকর্ড করা হয়েছে। আর এটি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর আশপাশেই থাকছে। টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। আবার উল্টো চিত্র শীত মৌসুমে। গত শীত মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে নেমেছিল। মাত্র কয়েক মাস আগে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। যা ছিল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। কনকনে এই ঠান্ডা অব্যাহত ছিল বেশ কিছুদিন।
আবহাওয়াবিদদের মতে, শীত ও গ্রীষ্মে ভূমিকা রাখা মহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের প্রবেশদ্বার চুয়াডাঙ্গা এবং এর কাছাকাছি এলাকাগুলো। গরমের সময় ভারতের গুজরাট বা এসব এলাকায় সৃষ্ট তপ্ত হাওয়া নানা পথ পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে। আর তা আসে চুয়াডাঙ্গার প্রান্ত দিয়ে। উত্তর গোলার্ধ থেকে আসা শীতল বায়ু অঞ্চলে সোজা হয়ে ঢুকতে পারে না। শীতের সময় এই উত্তরের হাওয়া বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশ চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ঢুকে। এছাড়া জলাভূমি কম থাকা, কর্কটক্রান্তি রেখার খুব কাছাকাছি চুয়াডাঙ্গার অবস্থানের কারণে চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া এমন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের অঞ্চলে শীতের সময় তীব্র শীত আর গরমের সময় প্রচণ্ড তাপমাত্রা প্রবাহ হয়। আরেকটা কারণ হচ্ছে কর্কটক্রান্তি। এই সময়টা কর্কটক্রান্তি বা সূর্য সব থেকে কাছাকাছি অবস্থান করে ওই এলাকায়। এ কারণেও তাপমাত্রা বেশি হয়। এছাড়া ওই এলাকায় সমতল ভূমি বেশি ও বেলে মাটি হওয়ার কারণে প্রচণ্ড তাপ হয়। এছাড়া জলাধার কমে যাওয়া, গাছপালা কমে যাওয়াও একটা কারণ। পাশাপাশি শীতকালের কথা যদি বলি, হিমালয় থেকে যে ঠান্ডা বাতাসটা আসে সেটাও কিন্তু উত্তর পশ্চিম দিক থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করছে। এই বাতাস সোজাসুজি প্রবেশ না করতে পারার কারণে চুয়াডাঙ্গা বা উত্তর পশ্চিমের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। ফলে ওই সময়টাতে সেখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি আর চলতি বছর জানুয়ারিতে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।