অসহায় পরিবারের নিরুপায় নির্মমতা!

27
Spread the love

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি।।


অন্ধকার ঘরের চৌকির ওপর বসে আছে ১৫ বছর বয়সী কিশোর রিয়াজ। গলায় শেকল পরিয়ে ঝোলানো আছে বড় তালা। তালার অন্যপ্রাপ্ত চৌকির সঙ্গে পেঁছানো। কোনোভাবে যেন শেকল খুলে বা চৌকি ভেঙে বাইরে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করেছে পরিবারের সদস্যরা।

গত ৩ বছর ধরে এভাবেই শেকল বন্দি রয়েছে কিশোর রিয়াজ। অবশ্য মাঝে মাঝে বাবা ও মায়ের সঙ্গে বাইরে যেতে পারলেও ছাড়া পায় না সে।

ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার একটি ভাড়া মা নার্গিস খাতুন ও বাবা লিটন হোসেনের সঙ্গে বসবাস করছে রিয়াজ।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ৭ বছর আগে শহরের আরাপপুর এলাকায় থাকা অবস্থায় কিছু বখাটে ছেলেদের পাল্লায় পড়ে চুরি শুরু করে। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই চুরি করে সে। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে শহরসহ আশপাশের জেলাতে গিয়েও চুরি করে। চুরি অনেকটা নেশার মত তার কাছে। বিভিন্ন সময় পুলিশ কিশোর রিয়াজকে বাড়িতে দিয়ে গেলেও তার চুরি বন্ধ হয়নি। নানা স্থান থেকে অভিযোগ পেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৩ বছর শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন তাকে। তারপরও সুযোগ পেলেই পালিয়ে যায় রিয়াজ।

কিশোরের বাবা লিটন হোসেন বলেন, ‘রিয়াজ সুযোগ পেলেই চুরি করে। চুরি যেন তার নেশা। উপায় না পেয়ে গত ৩ বছর ধরে গলায় শেকল পরিয়ে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। কী করব বলেন। যেখানেই যায় সেখান থেকেই চুরি করে। আমরা উপায় না পেয়ে বেঁধে রেখেছি। কতবার পুলিশ এসে বাড়িতে দিয়ে গেছে। কত ডাক্তার দেখিয়েছি কোনো সমাধান হচ্ছে না।’

মা নার্গিস খাতুন বলেন, ‘আমার ২ টি সন্তান। একটি মেয়ে আছে ও বড়। রিয়াজ আমার ছেলে। ওকে এভাবে রাখতে আমার খুব খারাপ লাগে। আমি কিচ্ছু চাই না। আমি শুধু চাই ও পড়াশোনা করুক আর অন্য ছেলেদের মতো খেলা করুক, ঘুরে বেড়াক।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক কোনো সমস্যার কারণে রিয়াজ এমন কাজ বার বার করছে। তাই নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দিলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘কয়েকটি কারণে শিশু রিয়াজ একই কাজ বার বার করছে। পরিবারে যদি এমন কেউ চুরির সঙ্গে জড়িত থাকত তাহলে হতে পারে, আবার ওর মানসিক বিকাশের কারণেই এটা হতে পারে। আমার মনে হয় ওর নিয়মিত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি মোটিভেশন দিলে হয়ত এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’