খুলনাঞ্চল রিপোর্ট।।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় ঘূর্ণিঝড়ে ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত এবং চলতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
বুধবার (২৮ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বুড়াইচ পাচুড়িয়া ও বানা ইউনিয়নে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও অসংখ্য গাছপালা ভেঙে এবং উপড়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় সড়কের উপরে গাছ পড়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে অন্ধকার হয়ে যায় দুটি ইউনিয়নের গোটা কয়েকটি গ্রাম।
গ্রামপুলিশ বেলায়েত হোসেন (৫৬) বলেন, বানা ইউনিয়নের দীঘল বানা, পণ্ডিত বানা, রুদ্র বানা, শিরগ্রাম, গড়ানিয়া, টাবনী, টোনাপাড়া, আউশের হাট, কঠুরাকান্দি, মাজপাড়া, আড়পাড়া। বুড়াইচ ইউনিয়নের পাকুড়ে, শিয়ালদি চরপাড়া, জয়দেবপুর, বড়গা, বিলপুটিয়া পানিগাতিসহ অন্তত ১৭টি গ্রামে ভয়াবহ ঝড় আঘাত হানে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় বুড়াইচ ইউনিয়নের পাকুড়িয়াতে। ঝড়ে কাঁচা-আধাপাকা ঘরবাড়ি, গাছপালা, পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, ধান, গমসহ কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিড়ে গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়াও পাচুড়িয়া ইউনিয়নের যুগিবরাট, ভাটপাড়া, চাদড়া, পাচুড়িয়া, দেউলি, চরনারানদিয়া, ধুলজুড়ি, চরভাটপাড়াসহ ৮টি গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে পাচুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি এ মুহূর্তে ঢাকায় আছি। তবে শুনেছি আমার পাচুড়িয়া ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী বানা ইউনিয়নে ঝড়ে ৯টি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য জানাব।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ বলেন, বুধবার রাত একটার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে দুই ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রামের প্রায় শতাধিক কাঁচা-আধাপাকা বাড়িঘর ও কয়েকশ গাছপালা উপড়ে যায়। বিস্তীর্ণ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুত সমিতির আলফাডাঙ্গা সাব জোনাল অফিসের এ জি এম ফাহিম হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সেখানে কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে, কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে কাজ চলছে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ঝড়ে সাড়ে ৯ হেক্টর জমির পেঁয়াজ, সাড়ে তিন হেক্টর জমির সবজি, দুই হেক্টর জমির ধনিয়া, এক হেক্টর জমির ভুট্টা, পাঁচ হেক্টর জমির গম ও তিন হেক্টর জমির মসুর পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় আর মাত্র ৭ থেকে ১০ দিন পর পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হতো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুলে ফেলতে হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ সংরক্ষণে অসুবিধা হবে।
আলফাডাঙ্গা ইউএনও সারমীন ইয়াছমিন বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করার আশ্বাস পেয়েছি।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।