গদখালীতে গোলাপের সংকট, প্রতিটি ২৫-২৮ টাকায় বিক্রি

36
Spread the love

যশোর অফিস
ফুলের আঁতুড়ঘর’খ্যাত দেশের প্রধান মোকাম গদখালীতে এ বছর ফুলের দাম অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। মঙ্গলবার শেষ মুহূর্তে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ২৮ টাকা পাইকারি দরে।

চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে গাঁদা ও গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশায় এবার গোলাপ ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছিল। তাই উৎপাদন কম হওয়ায় ফুলের দাম বেশি।

একই দিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ উৎসব ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা। এর পরই আসছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবস উদযাপনে ফুলের বিকল্প নেই। ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলের চাষিরা পার করছেন ব্যস্ত সময়।

হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের নয়ন হোসেন ১৮ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। গত বছর একই জমিতে গোলাপ আবাদে তাঁর যে খরচ পড়েছিল, এবার লেগেছে প্রায় দ্বিগুণ। বৃষ্টি ও কুয়াশায় ক্ষেতে পচন ধরায় ফুল রক্ষা করতে গিয়েই বেড়েছে ব্যয়।

৯ কাঠা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন টাওরা গ্রামের আমিনুল ইসলাম। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিক্রির লক্ষ্যে ফুলে ক্যাপ পরিয়ে রাখতে হয়েছে। পোকার আক্রমণ ও পচন রোধে নানা ভিটামিন, কীটনাশক স্প্রেসহ বাড়তি পরিচর্যা করতে হয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও কমেছে উৎপাদন। তাই গোলাপের দাম একটু বেশি বলে মন্তব্য তাঁর।

হাড়িয়া নিমতলা গ্রামের ফারুক হোসেন গতকাল প্রতিটি ফুল পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন ২৬ টাকা দরে। তিনি এ বছর দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। কিন্তু পচন রোগের কারণে উৎপাদন কম। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে গোলাপ বেচতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ চাষি।

গদখালীর পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী রনি আহমেদ। বাজারে গোলাপের সংকট জানিয়ে তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবসের আগে তাদের ২৫ থেকে ২৮ টাকা দরে গোলাপ কিনতে হয়েছে। খুচরা দোকানে ৩৫ টাকার ওপরে গিয়ে ঠেকবে এ দাম।

গদখালী বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফুলের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। এ বিষয়ে যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সারা বছর ফুল বিক্রি হলেও বসন্ত বরণ, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গোলাপের উৎপাদন কম হয়েছে। তার পরও তিন দিবস ঘিরে অন্তত শতকোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা তাঁর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ জানিয়েছেন, ঝিকরগাছার ৫ ইউনিয়নে ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এ বছর জানুয়ারিতে বৃষ্টি ও কুয়াশার কারণে গোলাপ চাষিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মধ্য ফেব্রুয়ারির আগেই তারা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হন।

ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের দেওয়া তথ্যমতে, গোলাপের দাম একটু বাড়তি হলেও গাঁদা ফুলের দাম বেশ কম ছিল। শুক্রবার থেকে দাম উঠতে শুরু করে। প্রতি হাজার গাঁদা বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। প্রতিটি রজনীগন্ধা বিক্রি হয়েছে ১০-১২ টাকায়, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। রঙিন গ্লাডিউলাস মানভেদে বিক্রি হয়েছে ১২ থেকে ১৬ টাকা, যা আগে ছিল ৮-১০ টাকা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১০ টাকায়।

ফুল বাঁধাইয়ের জন্য কামিনীর পাতা বিক্রি হয়েছে প্রতি আঁটি ২০ টাকায়। জিপসির আঁটি বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়, যা আগে ছিল ২০-২৫ টাকা। মালা গাঁথার জন্য চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে প্রতি ১০০ ফুল ২০০ টাকায়। গাঁদা ফুল বিক্রি হয়েছে প্রতি হাজার ২৫০-৩০০ টাকায়, যা আগে ছিল ১০০-১৫০ টাকা। লিলিয়াম প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা, দু’দিন আগেও যা ছিল ১০০ টাকা।