কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করে দুম্বার খামার

121
Spread the love

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় গড়ে উঠেছে মরুর প্রাণী দুম্বার থামার। এ থেকে লাভবান হচ্ছেন খামারি। উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরিচালিত দুম্বা খামারে একটি ছোট কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করে সেখানে লালন-পালন করা হচ্ছে দুম্বা।

এলাকার আবহাওয়া দুম্বা পালনে অনুকূল হওয়ায় বেড়েছে খামারের পরিধি। চুয়াডাঙ্গা-দর্শনা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কোষাঘাটা গ্রামে রয়েছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৪২ বিঘা জমির ওপর একটি বিশাল খামার। এই খামারে ছাগল, মুরগি পালনসহ রয়েছে হ্যাচারিও।

২০১৯ সালে খামারটিতে সংযোজন করা হয় দুম্বা। এখানে তৈরি করা হয় মরুভূমির আদলে কৃত্রিম মরুভূমি। পরে ঐ বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকার সাদেক অ্যাগ্রো থেকে আয়োশি ও রেড মাসাই জাতের ৬টি দুম্বা কিনে আনা হয়। এর মধ্যে একটি পুরুষ এবং ৫টি স্ত্রী। এই দুম্বায় মোট খরচ পড়ে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এরা বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। সাবকগুলো (বাচ্চাগুলো) সবুজ ঘাস, খড়, গম, ছোলা খেয়ে বেড়ে ওঠে। বর্তমানে এই খামারে রয়েছে ২৪টি দুম্বা। এর মধ্যে ১৬টি বড় ও ৮টি শাবক। এছাড়াও এই খামার থেকে চার বছরে ৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় ১৯টি দুম্বা বিক্রি করা হয়েছে।

খামার কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, ৪ বছর হলো দুম্বার খামার করা হয়েছে। দুম্বা মরুভূমি পছন্দ করে সে কারণে এখানে ছোট্ট পরিসরে কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি লাভজনক চাষ। স্ত্রী দুম্বাগুলো বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রথমে ৬টি দুম্বা দিয়ে শুরু করা হয়। এখন খামারে ২৪টি দুম্বা রয়েছে, এর মধ্যে ১৬টি বড় ও ৮টি শাবক। এছাড়াও চার বছরে ১৯টি ৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকার দুম্বা বিক্রি করা হয়েছে। ওজন অনুযায়ী দুম্বা বিক্রি করা হয়। ১ থেকে ৩০ কেজি ওজনের গুলো ২০০০ টাকা কেজি, ৩০ থেকে ৫০ কেজি ওজনের ১ হাজার ৭৫০ টাকা ও ৫০ কেজির উপরে গেলে ১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এগুলো সাধারণত পোষার জন্য কিনে নিয়ে যায়। এদের খাওয়ার কোনো ঝামেলা নেই ছাগল-ভেড়ার মতো গমের ভূষি, চালের কুড়া, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটাগুড়, খড়, মাল্টিভিটামিনসহ বিভিন্ন খাদ্য একত্রে মিশিয়ে তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়।

এছাড়া সবুজ ঘাস, কাঁঠাল পাতা এদের পছন্দ। প্রথম দিকে এদের খাবারের খরচ কম ছিল। দুম্বার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে খাবারের খরচ ও বাড়তে থাকে। বর্তমানে ২৪টি দুম্বার প্রতি মাসে খাবারের খরচ ৮ হাজার টাকা।

তিনি আরো জানান, দেশের অন্যান্য স্থানে কমবেশি যারাই দুম্বা পালন করছেন, কেউই লোকসানে নেই। কারণ ছাগল-ভেড়ার মতোই দুম্বা লালন-পালন করা যায়। বংশও বৃদ্ধি করে ছাগল-ভেড়ার মতোই। আবহাওয়া, খাবার, চিকিৎসাতেও নেই সমস্যা। একটু সতর্ক থাকলে ঠান্ডা লাগা রোগ এড়ানো সম্ভব। একটি পূর্ণবয়স্ক দুম্বা হতে সময় লাগে তিন থেকে চার বছর। তখন ওজন হয় ১০০ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত। দাম হতে পারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। কোরবানির সময় এর প্রচুর চাহিদা সৃষ্টি হয়।

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নীলিমা আক্তার হ্যাপি বলেন, দুম্বা আর ভেড়া কাছাকাছি প্রাণী। দুম্বা মরুর প্রাণী হলেও এটি একটি সহনশীল প্রাণী। দেখতে ভেড়ার মতো তবে পেছনের অংশ ভারি। ভেড়ার মতোই দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। মাংস উৎপাদনে এগিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে দুম্বা পালন লাভজনক। কোরবানির সময় থাকে প্রচুর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। আমাদের এই পরিবেশে দুম্বা পালনে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।